কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো। ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত স্বাভাবিক।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো বা ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত স্বাভাবিক তা আজকে আপনাদের জানাবো। এছাড়াও, কিডনির অন্যান্য টেস্ট নাম লিস্ট ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল কমানোর উপায় সম্পর্কে আজকে জানাবো। আমাদের শরীরের দুটি কিডনি প্রতিদিন প্রায় ১০০০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে এবং শরীরে দূষিত বর্জ্য প্রসাবের সাথে বাইরে বের করে দেয়। কিন্তু, নানা করনে কিডনি সমস্যা দেখা দিলে, কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং আস্তে আস্তে কিডনি ড্যামেজ হয়ে মানুষ মারা যায়।

ক্রিয়েটিনিন টেস্ট

কিডনি সমস্যার লক্ষণ দেখা দিলে অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শে কিডনি টেস্ট করান। অনেকে আবার কোন লক্ষণ ছাড়াই কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনি টেস্ট করান। কিডনি টেস্টের মধ্যে একটি কমন টেস্ট হচ্ছে সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট। মূলত কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো সেটা হচ্ছে এই ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত স্বাভাবিক। তাই আজকে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত বা কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো সেটা আপনাদের জানাবো।


আজকে যা জানবো

  • কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো বা ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত স্বাভাবিক
  • ক্রিয়েটিনিন ছাড়া কিডনির অন্যান্য টেস্ট নাম লিস্ট
  • কাদের কিডনি রোগের পরীক্ষা করা জরুরি
  • সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল কমানোর উপায়

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো বা ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত স্বাভাবিক

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো বা ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত তা জানার জন্য অবশ্যই আপনাদের কিডনির সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করতে হবে। তবে, সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্টই কেবল কিডনির একমাত্র টেস্ট নয়।

তাই আপনারা যারা জানতে চান, কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো বা ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত স্বাভাবিক? তাদের জন্য আমরা ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত তা জানাচ্ছি। কিন্তু, শুধুমাত্র ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত, তা দিয়ে কিডনি ভালো আছে কিনা বিচার করা ঠিক হবে না। কারণ, কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনির আরও টেস্ট রয়েছে।

আরও পড়ুন

ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত

ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত

কিডনি সমস্যা বোঝার জন্য চিকিৎসকরা প্রথমত সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করান। ব্লাডের মাধ্যমে এ পরিক্ষাটি করা হয়।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর স্বাভাবিক মাত্রা পুরুষের ক্ষেত্রে ০.৬ হতে ১.২ gm/dl এবং নারীদের ক্ষেত্রে ০.৫ হতে ১.১ gm/dl।

এছাড়া কিশোরদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রা ০.৫ থেকে ১.০ gm/dl।

যাদের একটি কিডনি নেই তাদের ক্ষেত্রে ১.৮ পর্যন্ত স্বাভাবিক।

শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক মাত্রা ০.৩ থেকে ০.৭ gm/dl।

কিডনি সমস্যার ক্ষেত্রে সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বেড়ে যায়। তবে, প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ৫.০ gm/dl এর অধিক হলে কিডনি ড্যামেজ হয়েছে বলে ধরা হয়।

নানা কারনে ক্রিয়েটিনিন টেস্ট রিপোর্ট স্বাভাবিক এর চেয়ে কম বা অধিক হতে পারে। এছাড়া, ক্রিয়েটিনিন টেস্ট দ্বারা কিডনির প্রবলেম বোঝা গেলেও, সমস্যার বিস্তারিত জানতে অন্যান্য টেস্ট করা হয়। তাই, কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার জন্য ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর সাথে, সমস্যার মাত্রা অনুসারে অন্যান্য টেস্ট এর দরকার হতে পারে। যা আপনার ডাক্তারের পরামর্শে হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

ক্রিয়েটিনিন ছাড়া কিডনির অন্যান্য টেস্ট নাম লিস্ট

সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেষ্ট এর পাশাপাশি, কিডনি কত বেশি আক্রান্ত তা অধিক ভালো ভাবে বোঝার জন্য জিএফআর (গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট) এবং সিসিআর (ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট) টেস্ট করানো হয়।

এছাড়া, কিডনির টিউমার, কিডনির পাথর, কিডনির আকৃতি সহ আনন্য প্রবলেম বোঝার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হয়।

তাছাড়া, কিডনি সমস্যায় শরীরের অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জটিলতার পরীক্ষা দেয়া হতে পারে। এর ভিতরে রয়েছে রক্তের হিমোগ্লোবিন, ফসফেট, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর মাত্রা পরীক্ষা। এছাড়া কিডনির প্রবলেমে রক্তের শর্করা, ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপ সহ অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়।

কাদের কিডনি রোগের পরীক্ষা করা জরুরি

একজন নারী ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করছেন

কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আপনারা কিডনি টেস্ট করবেন। কিন্তু,
কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলেই যে কিডনি সমস্যা হয়েছে, এমনটি ভাবার কোন কারণ নাই। আবার কোন লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া ব্যতীতও কিডনি চুড়ান্ত পর্যায়ে ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।

তাই, প্রাপ্ত বয়স্করা বছরে অন্তুত ১ বার ও যারা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে আছেন তারা ৬ মাসের মধ্যে কমপক্ষে ১ বার কিডনি টেস্ট করবেন। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার জন্য, ডাক্তার আপনার লক্ষণ গুলো শুনে দরকারী টেস্ট দিবেন। সেগুলো করে, আপনারা চিকিৎসকের কাছ হতে নিশ্চিত হবেন কিডনি ভালো আছে কিনা।

কিডনি টেস্ট জরুরি হয়ে পড়ে সাধারণত বয়স ৪০ বছর ছাড়ালে। তবে এর বাইরেও অনেকের উচিৎ রেগুলার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করানো। কিডনি টেস্ট যাদের জন্য জরুরি।

  • ১। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি
  • ২। উচ্চ রক্তচাপের রোগী
  • ৩। কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি
  • ৪। যাদের পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস আছে।
  • ৫। যাদের ঘন ঘন ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হয়।
  • ৬। অটোইমিউন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি।


আরও পড়ুন


সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল কমানোর উপায়

১। প্রোটিন কম খান

প্রোটিন দেহের জন্য বেশ দরকারি। কিন্তু সীমা ছাড়ালেই এটি ক্রিয়েটিনিন বাড়াবে। তবে এক্ষেত্রে দোষটা বেশি প্রাণীজ আমিষের। বিশেষ করে রেড মিটই সর্বশ্রেষ্ঠ আসামি। আর এজন্য চাহিদা পূরণে দুগ্ধজাত খাদ্য ও উদ্ভিজ আমিষে জোর দেওয়ার জন্য বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

২। আঁশজাতীয় খাবার বেশি খান

প্রোটিনের উল্টো কাজটা করে ফাইবার তথা আঁশজাতীয় খাবার। হজম শক্তিতে গতি এনে বাড়তি ক্রিয়েটিনিন শরীর থেকে বের করে দিতে পারে এই ফাইবার তথা আঁশজাতীয় খাবার। অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে, দীর্ঘসময় ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে দেহে কম মাত্রায় ক্রিয়েটিনিন দেখা যায়। ফলমূল, শাকসবজি এবং দানাদার খাবারে ফাইবার বা আঁশ পাবেন।

৩। প্রচুর পানি খান

আমাদের শরীরে পানির চাহিদা দুরকম। একটা চাহিদা সাধারণত বোঝা যায় না, আরেকটা হলো তৃষ্ণা। এজন্য, তৃষ্ণার অপেক্ষায় থাকলে চলবে না। প্রতিদিন মেপে ২-৩ লিটার পানি খাওয়া নিশ্চিত করতেই হবে। তা না হলে গোপনে আপনার শরীরে তৈরি হবে ডিহাইড্রেশন। এর ফলে বেড়ে যাবে ক্রিয়েটিনিন। মনে রাখবেন, দিনে ৮-১০ গ্লাসের হিসাবটা মেনে চললেই যথেষ্ট।

৪। লবণ খাওয়া কমান

অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ক্ষতি অনেক।এটি রক্তচাপ বাড়ায় । অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিডনির অসুখেরও। তাই, একেবারেই এড়িয়ে চলুন বাইরের প্যাকেট করা বা প্রক্রিয়াজাত খাবার। কারণ মাত্রাতিরিক্ত লবণ মেশানো থাকে এসব খাবারে। লবণ খাওয়ার অভ্যাস একেবারে কমিয়ে দিয়েও চাইলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন ক্রিয়েটিনিন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন লবণ খাওয়ার পরিমাণ ২ টেবিল চামচের বেশি যেন না হয়।এই ২ টেবিল চামচের এর মধ্যে বিভিন্ন খাবারে থাকা লুকানো লবণও কিন্তু আছে।এছাড়া, লবণ বেশি খেলে কিন্তু অকালে অন্ধত্বের শিকারও হতে পারেন।

৫। ধূমপান-অ্যালকোহল ও ভারী ব্যায়াম পরিহার করুন

দেহে ক্রিয়েটিনিন বাড়াতেও ধূমপান ও অ্যালকোহলের জুড়ি নেই। একইসাথে ভারী ব্যায়ামও করতে নিষেধ করেছেন গবেষকরা। বিশেষ করে ওয়েট লিফটিং, সার্কিট ট্রেনিং-এর মতো ব্যায়ামগুলোও নাকি দেহে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর এজন্য কিডনি সচেতনদের খানিকটা হালকা গোছের ব্যায়ামে নজর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

আমাদের শেষ কথা

আজকে আমরা আপনাদের, কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো বা ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত স্বাভাবিক তা জানালাম।এছাড়া, ক্রিয়েটিনিন ছাড়া কিডনির অন্যান্য টেস্ট নাম লিস্ট, কাদের কিডনি রোগের পরীক্ষা করা জরুরি ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল কমানোর উপায় সম্পর্কে জানিয়েছি।আশাকরি আপনারা ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত তা বুঝতে পেরেছেন।

যাদের কিডনি টেস্টে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি আছে, তারা একজন কিডনি কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চুলন। এবং ক্রিয়েটিনিন কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো ফলো করুন। এছাড়া নিয়মিত কিডনি চেক আপ করান। আমাদের মনে রাখা উচিত, কিডনি ছাড়া আমরা বাচতে পারি না। তাই, কিডনি ভালো রাখার উপায় গুলো জানা জরুরী। কিডনি বিষয়ে আপনারা আরও কিছু জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমাদের টিম আপনাকে সঠিক তথ্য দিতে সবসময় প্রস্তুত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url