গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ ও করনীয় - বাংলা।

আজকে আমরা আপনাদের জানাবো, একজন নারীর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কখন দেখা দেয় এবং গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ। এছাড়াও থাকবে গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে সাদা স্রাব হয় কিনা এবং গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ বুঝলে করণীয় কি?


একজন গর্ভবতী নারী

গর্ভবতী হওয়া একজন মায়ের জন্য নিঃসন্দেহে সবচেয়ে কাঙ্খিত একটি বিষয়। একই সাথে বিষয়টি অনেক ভয়ের। কারণ এটি একজন নারীর জীবনে একটা ঝুঁকিপূর্ণ সময়। বিশেষ করে গর্ভবতী হওয়ার পর প্রথম তিন মাস এবং শেষ তিন মাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এই সময় গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হয় ও যত্ন নিতে হয়।

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম তিন মাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এ সময় যেকোনো অসতর্কতার ফলে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। এবং শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। যার ফলে পরবর্তীতে গর্ভধারণের সমস্যা হতে পারে। তাই গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে লক্ষণ সমূহের দিকে খেয়াল রাখা জরুরী।

যে সকল হবু মায়েরা গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণসমূহ বুঝে সতর্ক থাকেন এবং শরীরের যত্ন নেন, তারা নিরাপদে প্রেগনেন্সি পিরিয়ড পার করেন এবং একটি সুস্থ স্বাভাবিক সন্তানের জন্ম দেন। তাই, আজকে আমরা আপনাদের জানাবো গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সফল লক্ষণ সমূহ। যেগুলো দেখে আপনারা নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি গর্ভবতী কিনা।


আজকে যা জানাবোঃ


  • গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কখন দেখা দেয়?
  • গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ
  • গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়?
  • গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষ্মণ বুঝলে করনীয়


গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কখন দেখা দেয় ?

সাধারণত সহবাসের পরে যদি মেয়েদের ডিম্বানু পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়, তাহলে মেয়েরা গর্ভবতী হয়। ডিম্বাণু টি নিষিক্ত হওয়ার পরেই মেয়েদের গর্ভধারণের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়?

ডিম্বাণুটি নিষিক্ত হওয়ার পর ফেলোপিয়ান টিউব (Fallopian Tube) হয়ে জরায়ুতে আসতে ৬ দিন সময় লাগে। তাই গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই অনেক মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পেতে থাকে। তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পেতে দেরি হতে পারে।

গবেষণা অনুযায়ী, গর্ভধারণের ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ নারীর এবং আট সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ নারীর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পায়। গর্ভবতী হওয়া লক্ষণগুলো বোঝার জন্য মেয়েদের সতর্ক থাকা উচিত এবং সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয় তা জানা উচিত।

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ- বাংলা (First week pregnancy symptoms)

একজন গর্ভবতী নারী বমি করছে

সাধারণত সহবাসের পর নির্ধারিত সময়ে মেয়েদের পিরিয়ড বন্ধ হলে তারা গর্ভবতী কিনা সেটা চেক করা হয়। অবশ্য,
মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের নানা কারণ থাকতে পারে।

এমনকি গর্ভবতী হওয়ার পরও পিরিয়ড হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। যারা জানেন না, গর্ভবতী হওয়ার পর কি মাসিক হয়? তাদের জন্য আবার বলছি, অনেক সময় গর্ভবতী হওয়ার পরও পিরিয়ড হতে পারে। তাই পিরিয়ড বন্ধ হওয়াই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার একমাত্র লক্ষণ নয়।

তাই পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার কিছু লক্ষণ এর বিষয়ে মেয়েদের খেয়াল রাখতে হবে। সেজন্য, গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে লক্ষণ সমূহ আপনাদের ক্ষেত্রে ঘটে কিনা সেটা দেখতে হবে। এছাড়া, অনিয়মিত মাসিক হলেও বাচ্চা নেওয়ার যে উপায় রয়েছে তাতে গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ একই রকম। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ হলোঃ

১। ইমপ্লান্টেশন বিল্ডিং

সহবাসের পর মেয়েদের ডিম্বাণু নিষিক্ত হলে ফেলোপিয়ান টিউব হয়ে জরায়ুতে এসে জরায়ুর দেয়ালে আটকে থাকে। পরবর্তীতে জরায়ুতে থাকা এই ব্রুনটির টির বৃদ্ধি হতে থাকে। এই সময় মেয়েদের পিরিয়ড ছাড়াই হালকা থেমে থেমে ব্লিডিং হতে পারে। এটাকে ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং বলে। যদি আপনার সহবাসের পর এবং পিরিয়ডের নির্ধারিত তারিখের দুই এক সপ্তাহ আগে এরকম ব্লিডিং হয় তাহলে সেটা গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে লক্ষণ হতে পারে।

২। প্রসাবের চাপ বেড়ে যাওয়া

একজন নারী গর্ভবতী হলে তার শরীরে তরল উৎপাদনের মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে কিডনির কার্যকারিতা অনেক বৃদ্ধি পায়। এই কারণে গর্ভবতী নারীর প্রথম সপ্তাহ থেকেই প্রসাবের চাপ বেড়ে যাবে এবং ঘন ঘন প্রসাবের বেগ আসবে।


আরও পড়ুনঃ

৩। তল পেটে খিচুনি অনুভূত হওয়া ( ক্রাম্পিং)

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ এর মধ্যে রয়েছে তলপেটে খিচুনি অনুভূত হওয়া। যদি আপনারা সহবাসের পর এবং পরবর্তী নির্ধারিত পিরিয়ডের আগে তলপেটে খিচুনি অনুভব করেন, তাহলে এটা গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে।

৪। গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়া

গর্ভবতী হওয়ার পরপরই শরীর সকল উপাদান জরায়ুতে রোপিত বীজটির বৃদ্ধির জন্য কাজ শুরু করে দেয়। যার ফলে এই সময় গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হিসেবে এটি দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।

৫। পেট ফাঁপা অনুভুত হওয়া

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ হিসেবে পেট ফাপা অনুভূত হয়। এই সময় গ্যাসের চাপে পেট ফাঁপা দেখা দেয়। গর্ভধারণের প্রায় পুরো সময় জুড়েই গ্যাস ও পেট ফাপার সমস্যা থাকে। যে কারণে চিকিৎসকরা গর্ভকালীন সময়ে গ্যাসের ঔষধ দিয়ে থাকেন।

৬। ব্রেস্টের পরিবর্তন ও ব্যাথা অনুভূত হওয়া

গর্ভবতী হওয়ার পর মেয়েদের ব্রেস্টের পরিবর্তন ও ব্যথা অনুভূত হয়। এই সময় মেয়েদের এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ব্রেস্ট ভারি হয়ে ওঠে এবং ব্রেস্ট ব্যথা অনুভব হয় যা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ।

৭।স্বাদ পরিবর্তন হওয়া

মেয়েদের প্রেগন্যান্সি প্রথম সপ্তাহ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে খাবারের স্বাদ পরিবর্তন হওয়া। এই সময় শরীরের বিভিন্ন ধরনের হরমোনের বৃদ্ধির কারণে খাবারের স্বাদ ভিন্ন রকম লাগবে।

৮। মাথাব্যথা ও মুড সুইং হওয়া

গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মেয়েদের মুড সুইং দেখা দিবে। হঠাৎ হঠাৎ করে ভালোলাগা এবং খারাপ লাগা কাজ করবে। এছাড়া এ সময় মাথাব্যথা শুরু হতে পারে যা গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে তিন মাস পর্যন্ত হতে পারে।

৯। স্বপ্ন দেখা

গর্ভবতী হওয়ার পর মেয়েদের স্বপ্ন দেখার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় মেয়েরা নানা ধরনের স্বপ্ন দেখা শুরু করে। তবে কি কারনে গর্ভবতী মেয়েরা বেশি স্বপ্ন দেখে তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। ধারণা করা হয়, এ সময় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মেয়েরা বেশি স্বপ্ন দেখে থাকেন।

১০। মর্নিং সিকনেস

মর্নিং সিকনেস গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের আরেকটি লক্ষণ, যা প্রায় তিন মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। গর্ভবতী হওয়ার পর সকালবেলা শরীর অনেক দুর্বল ও অসুস্থ লাগে লাগে। বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পর মর্নিং সিকনেস বেশি কাজ করে।

১২। ক্লান্তি অনুভব করা

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি অনুভব হওয়া। গর্ভবতী হওয়ার পর নারীরা প্রথম তিন মাস ক্লান্তি অনুভব করেন। এ সময় ব্রুনটি পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য এর বৃদ্ধি করতে থাকে। যার ফলে সব সময় শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়।

১৩। বমি বমি ভাব

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহের মধ্যে বমি বমি ভাব আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এটিও গর্ভধারণের পর প্রায় তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে হতে পারে। বিশেষ করে সকালবেলা বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া বেশি ঘটতে পারে। তবে দিনের যেকোনো সময় বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।

১৪। গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ হিসেবে সাদা স্রাব বা ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ দেখা দিতে পারে। গর্ভধারণের পর যোনিপথ দিয়ে যাতে কোন জীবাণু জরায়ুতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য এই সময় সাদাস্রাব বেড়ে যায়। এটা দেখতে সাদা এবং চটচটে হয়ে থাকে। যা গর্ভধারণের পর থেকে শুরু করে, গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে হতে পারে।

গর্ভবতী হওয়ার কত দিন পর বমি হয়?

অনেকেই জানতে চান, গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়? এটা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। অনেক গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহ থেকেই বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। তবে, সাধারণত গর্ভধারণের চার সপ্তাহ বা ছয় সপ্তাহ পর থেকে বমি বমি ভাব বা বমি শুরু হতে পারে। এ সময় গর্ভবতী মেয়েদের খুবই অস্বস্তি লাগে।

আরও পড়ুনঃ


গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ বুঝে করনীয়

একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী

গর্ভবতী হওয়ার পর যত দ্রুত লক্ষণ বোঝা যায় ততই ভালো। উপরের লক্ষণগুলো কারো সাথে মিলে গেলে দ্রুত প্রেগনেন্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া জরুরী যে আপনি গর্ভবতী কিনা। কারণ গর্ভবতী হওয়ার পর প্রথম তিন মাসে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করলে গর্ভবতী মায়ের বিপদ হতে পারে। তাই প্রেগনেন্সি টেস্টের মাধ্যমে গর্ভবতী নিশ্চিত হওয়ার পর করণীয় হলোঃ

  • ১। একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফলিক এসিড সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধ খাওয়া।
  • ২। কোন ধরনের ভারী কাজ না করা। বিশেষ করে যেসব কাজে তলপেটে ঝাঁকুনি লাগে সেগুলো না করা।
  • ৩। কাঁচা বা ভালো করে রান্না হয়নি এমন খাবার না খাওয়া। এ সময় সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • ৪। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চা কফি না খাওয়া এবং কোন মাদক সেবন না করা।
  • ৬। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং পরিমিত ঘুমানো।
  • ৭। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই সময় কোন ঔষধ না খাওয়া।


আরও পড়ুনঃ

আমাদের শেষ কথা

আজকে আমরা আপনাদেরকে জানালাম, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কখন দেখা দেয় এবং গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে লক্ষণ সমূহ। এছাড়া গর্ভবতী হওয়ার প্রথম তিন মাসে করনীয় কি ও গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়, এই বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করেছি।

সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনে একটা নতুন সময়। এই সময় যেরকম রয়েছে একটি সন্তানের জন্য নতুন স্বপ্ন। তেমনি রয়েছে সন্তান ও মায়ের জন্য ঝুঁকি। তাই গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন গুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকুন এবং গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়, আপনাদের সচেতনতা ও সতর্কতাই পারে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তানের জন্ম দিতে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url