গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন। দ্রুত যা করবেন।

গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের জানাবো। এছাড়াও থাকবে আরো কিছু বিপদ চিহ্নের লক্ষন, বিপদ চিহ্ন দেখা দিলে করনীয় কি এবং গর্ভবতী মায়ের কিছু সতর্কতা ও যত্ন বিষয়ে পরামর্শ।গর্ভবতী হওয়া একজন নারীর জীবনে বা একটি পরিবারের কাছে সবচেয়ে কাঙ্খিত ও আনন্দের একটি বিষয়। এই সময় পরিবারের সবাই একটি নতুন শিশুর আগমনকে কেন্দ্র করে নানা স্বপ্ন দেখে।

গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন


কিন্তু, একজন গর্ভবতী মায়ের জীবনে এটি সম্পূর্ণ নতুন একটা সময়। এ সময়ে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। গর্ভাবস্থায় সচেতন ও সতর্ক না থাকলে যে কোন সময় মা ও সন্তানের জন্য বিপদ হতে পারে। বাংলাদেশে গর্ভকালীন অসতর্কতার কারণে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার তুলনামূলক অনেক বেশি। যদিও এই হার আগের থেকে কমেছে।

গর্ভবতী মায়ের মারাত্মক পাঁচটি বিপদ চিহ্ন সহ সকল ধরনের ঝুঁকির বিষয় সচেতন ও সতর্ক থাকলে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিলে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব। একই সাথে গর্ভবতী মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গর্ভকালীন সতর্কতা ও যত্ন জরুরী। কারণ এই সময় একটি দেহে দুইটি প্রাণের বসবাস এবং বৃদ্ধি ঘটে।

তাই এই আর্টিকেলটিতে আমারা জানিয়েছে একজন গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন সহ আরো কিছু বিপদ চিহ্ন দেখা দিলে কি করবেন এবং গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য কিছু সতর্কতা ও যত্ন।

আজকে যা জানবো

  • গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন
  • গর্ভবতী মায়ের আরো কিছু বিপদ চিহ্ন
  • গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন দেখা দিলে করনীয়
  • গর্ভবতী মায়ের কিছু সতর্কতা ও যত্ন

আরও পড়ুনঃ


গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন

গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন


১। রক্তস্রাব


গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন এর একটি হচ্ছে রক্তস্রাব হওয়া। গর্ভকালীন যেকোনো সময় যদি হঠাৎ গর্ভবতী নারীর রক্তস্রাব শুরু হয়। তাহলে এটি গর্ভবতী মায়ের জন্য মারাত্মক বিপদ চিহ্ন। এটি মা ও সন্তানের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ।এরকম হলে গর্ভবতী মায়ের দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।

২। চোখে ঝাপসা দেখা ও প্রচন্ড মাথা ব্যাথা


চোখে ঝাপসা দেখা ও প্রচন্ড মাথা ব্যথা হওয়া গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্নের মধ্যে আরেকটি বিপদ চিহ্ন। যদি কোন গর্ভবতী নারী ২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে চোখে ঝাপসা দেখেন এবং প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয়, তাহলে তা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এরকম হলে দ্রুত গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসার প্রয়োজন।

৩। ভীষন জ্বর


গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন এর মধ্যে আরেকটি বিপদ চিহ্ন হলো ভীষণ জ্বর হওয়া। যদি গর্ভবতী মায়ের ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি তাপমাত্রা থাকে তাহলে তা ঝুঁকিপূর্ণ এবং তাপমাত্রা যদি ৩৯° সেলসিয়াসে বেশি হয় তাহলে দ্রুত গর্ভবতী মাকে চিকিৎসা করাতে হবে।

৪। খিচুনি


গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্নের মধ্যে রয়েছে খিচুনি হওয়া। গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় বা ডেলিভারির সময় কিংবা ডেলিভারির পরে যদি গর্ভবতী নারীর প্রচন্ড খিচুনি দেখা দেয়, তাহলে এটি গর্ভবতী নারীর মারাত্মক বিপদ চিহ্ন। এটি গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যদি আপনাদের কারো গর্ভকালীন সময়ে খিচুনি দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন।

৫। বিলম্বিত প্রসব


বিলম্বিত প্রসাব গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্নের মধ্যে আরেকটি বিপদ চিহ্ন। যদি কারো ১২ ঘন্টার বেশি প্রসাব ব্যাথা থাকে তাহলে তা গর্ভবতী মা ও সন্তানের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এরকম হলে দ্রুত গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসার প্রয়োজন।


আরও পড়ুনঃ


গর্ভবতী মায়ের আরো কিছু বিপদ চিহ্ন


গর্ভবতী মায়ের উপরে উল্লেখিত পাঁচটি বিপদ চিহ্ন খুবই মারাত্মক যা গর্ভবতী মা ও সন্তানের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের আরো কিছু বিপদ চিহ্ন রয়েছে। সেগুলো হলোঃ

১। অতিরিক্ত বমি

অতিরিক্ত বমি হওয়া একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য আরেকটি বিপদ চিহ্ন। একজন গর্ভবতী নারীর দিনে দুইবার বমি হওয়া স্বাভাবিক। তবে গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত বমি হলে মা ও শিশুর শরীরের পানি শূন্যতা দেখা দেয়। ফলে মা ও শিশুর বিপদ হতে পারে। তাই অতিরিক্ত বমি হলে গর্ভবতী মায়ের দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।

২। উচ্চ রক্তচাপ

গর্ভবতী নারীর রক্তচাপ একটু বেশি থাকা স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত উচ্চ রক্তচাপ বাচ্চা ও মায়ের জন্য ক্ষতিকর। এটি একলামসিয়ার একটি লক্ষণ। তাই গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত এবং এবং হাই প্রেসার হলে দ্রুত কমানো উচিত।

৩। উচ্চ ডায়াবেটিস

অনেক গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী। কারণ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের মাত্রা বেশি হলে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীর উচ্চ ডায়াবেটিস থাকলে দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।

৪। পেটে ব্যাথা

গর্ভবতী নারীর পেটে ব্যথা হওয়া আরেকটি বিপদ চিহ্ন। বিশেষ করে, প্রথম তিন মাসে গর্ভবতী নারীর তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া বিপদের লক্ষণ হতে পারে। এরকম হলে অবশ্যই গর্ভবতী নারীর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৫। শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হওয়া

গর্ভাবস্থার ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহ পরে বাচ্চা নড়াচড়া করা শুরু করে। যা গর্ভবতী মা টের পান। গর্ভাবস্থায় পাঁচ মাস পরে শিশুর নড়াচড়া বাড়তে থাকে, যা ডেলিবারি পর্যন্ত চলতে থাকে। এই সময়ে যদি বাচ্চার নড়াচড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয় বা বাচ্চার নাড়াচড়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় কিংবা নড়াচড়ার ধরনের পরিবর্তন মনে হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

৬। শরীরে অতিরিক্ত পানি আসা

গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর হাত পা ফুলে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হাত পা ফুলে যায় বা শরীরে পানি আসে তা বিপদের কারণ হতে পারে। এরকম হলে গর্ভবতী মায়ের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৭। সময়ের আগে পানি ভাঙ্গা

সাধারণত গর্ভবতী নারীর ৩৭ সপ্তাহ পর ডেলিভারি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি এর আগে পানি ভেঙ্গে যায়, তাহলে গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এরকম হলে দ্রুত গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসার প্রয়োজন।


গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন দেখা দিলে করনীয়

গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন সহ অন্য যে সকল বিপদ চিহ্ন গুলো আলোচনা করা হলো, সেগুলো কারো সাথে ঘটলে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। এজন্য গর্ভবতী মাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা অন্য যে কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং জরুরী চিকিৎসা দিতে হবে।গর্ভবতী মায়ের এরকম পরিস্থিতির জন্য পরিবারের দায়িত্বশীল একজনকে প্রস্তুত রাখা এবং প্রয়োজনীয় অর্থ ও যানবাহনের ব্যবস্থা রাখা ভালো।


আরও পড়ুনঃ


গর্ভবতী মায়ের কিছু সতর্কতা ও যত্ন

গর্ভবতী নারী ও তার স্বামী

১। উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা

গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং টেনশন ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার উপায় গুলো ফলো করুন।

২। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা

কোন গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিসের মাত্রা বেশি থাকলে, চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া উপায় গুলো ফলো করুন।

৩। ভারী কাজ না করা

গর্ভবতী মায়েরা ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে, পেটে ধাক্কা বা চাপ লাগে এরকম কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা হিসেবে অবশ্যই এসব কাজ করা থেকে দূরে থাকা জরুরী।

৪। শিশুর নড়াচড়া খেয়াল রাখা

গর্ভাবস্থার পাঁচ মাসের পর শিশু নড়াচড়ার দিকে খেয়াল রাখুন। শিশুর প্রতিদিনের স্বাভাবিক নাড়াচাড়ার পরিবর্তন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া মা ও সন্তানের জন্য উপকারী। কারণ পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয়। পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানে পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। এজন্য গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন এড়াতে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের পুষ্টিকর খাবারের তালিকা সহ গর্ভাবস্থার পুরো সময় পুষ্টিকর খাবার খান।

৬। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া

শিশুর বিকাশ ও বৃদ্ধির জন্য গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরী। তবে সারাদিন বিশ্রাম না নিয়ে, কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করা বা হালকা কাজ করা গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো। তবে এটা ডাক্তারের পরামর্শ করা জরুরি, কারণ এক একজনের এক এক ধরনের সমস্যা থাকতে পারে।

৭। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো

গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত ডাক্তার দেখানোর জরুরী। কারণ, এই সময় কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়ের ও বাচ্চার কন্ডিশন দেখা হয়। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের ও বাচ্চার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন করতে হয়। একজন গর্ভবতী মায়ের কমপক্ষে প্রতি তিন মাসে একবার ডাক্তার দেখানো উচিত। তবে, যে কোন ধরনের জটিলতায় এর পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে।

৮। প্রসব পরিকল্পনা করা

একটি দম্পতির কাছে একটি সন্তান অনেক বড় একটি পাওয়া। তাই, গর্ভবতী মায়ের যেকোনো ধরনের বিপদ এড়ানোর জন্য প্রসব পরিকল্পনা করা জরুরী। এর মধ্যে কোথায় ডেলিভারি করাবেন, প্রয়োজনীয় লোকবল, অর্থ, যানবাহন ও জরুরি প্রয়োজনে একই গ্রুপের রক্তের ব্যবস্থা রাখা উচিত, প্রসব পরিকল্পনা থাকলে পরিকল্পনা মাফিক সকল কাজ করা সম্ভব হয়।

আমাদের শেষ কথা

আজকে আমরা আপনাদেরকে জানালাম গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন। এবং এই বিপদ চিহ্ন গুলো দেখা দিলে কি করবেন। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের আরো কিছু বিপদ চিহ্ন, সতর্কতা ও যত্ন নিয়ে আলোচনা করেছি।

আমাদের দেশে গর্ভবতী নারীদের ঝুঁকির বিষয়ে এখনো অনেকেই অসচেতন রয়েছেন। যার ফলে, অনেক অনাকাঙ্খিত বিপদ ঘটে থাকে। অথচ একটু সচেতন ও সতর্ক হলে এসব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই অবশ্যই একজন গর্ভবতী মায়ের পাঁচটি বিপদ চিহ্ন দেখা দিলে, অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা করা জরুরী।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url