অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ। অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া ঔষধ

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ ও অনিয়মিত মাসিকের ভেষজ ঔষধ এর মাধ্যমে, অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের জানাবো। স্বাভাবিক ভাবে একজন মহিলার মাসিক চক্র হয় ২৮ দিনের। এর কিছু দিন কম বেশি হওয়া স্বাভাবিক। 

যদি কোন মহিলার মাসিক চক্র ২৪ দিনের থেকে কম বা ৩৫ দিনের বেশি হয়, তাহলে সেটিকে অনিমিয়ত মাসিক বলা হয়। বেশিরভাগ মেয়েদের প্রতি বছর ১১ থেকে ১৩ বার মাসিক হয়। রক্তক্ষরণ সাধারণত ৫ দিন স্থায়ী হয় তবে এটি ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে।

স্যানিটারি ন্যাপকিন

মেয়েদের মাসিক সাধারণত যৌবনের সময় অর্থাৎ ১০-১৫ বছর বয়েসের মধ্যে শুরু হয় এবং এগুলি মেনোপজ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সাধারানত একজন মহিলার ৪৫-৫০ বছর বয়সে
মেনোপজ হয়।তবে, মেয়েদের মসিক শুরু হওয়ার পর, বিভিন্ন কারনে অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়া বা অনিমিয়ত মাসিক হতে পারে।

এছাড়া অনেক মেয়েদের দীর্ঘদিন বিল্ডিং হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। মেয়েদের ইস্ট্রোজেন হরমোন এর ঘাটতি সহ নানা কারণে এই সমস্যা গুলো হতে পারে। তবে ভালো খবর হলো, মেয়েরা অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া ঔষধ ব্যবহার করে, অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় পেতে পারেন।এজন্য, মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয় এবং অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ কি তা জানা উচিত।


আজকে যা জানাবো

  • অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ। অনিয়মিত মাসিক কেন হয়?
  • অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায়। অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া ঔষধ।
  • অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে কিছু টিপস

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ। অনিয়মিত মাসিক কেন হয়?

মেয়েদের জরায়ু

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ, অনেক থাকতে পারে। অনেক মেয়েদের হয়তো মাঝে মাঝে মাসিকের তারিখ পেরিয়ে গেলেও মাসিক হতে সবসময় দেরি হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অনিয়মিত মাসিক কেন হয়? বা মাসিক না হওয়ার কারণ কি? সাধারনত অনেক বেশি স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অতিরিক্ত দুর্বলতা, জীবনযাত্রায় বেশ বড় কোনও পরিবর্তন এসব কারণে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে বা মাসিক বন্ধ হতে পারে।

এছাড়া, অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ হিসেবে হরমোনের প্রভাব বড় ভুমিকা রাখে। হরমোনের প্রভাবে বয়ঃসন্ধিকালে দেহে বড় পরিবর্তন আসে। মেয়েদের প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোন এর ভারসাম্য অর্জনে বেশ কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। এটাও অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণ হতে পারে। তবে, এই সময়ে অনিয়মিত মাসিক হওয়া স্বাভাবিক।


এটি মনে রাখা জরুরি যে, যখন মেয়েদের প্রথম মাসিক শুরু হয়, তখন নিয়মিত ঋতুচক্র স্থাপন করতে ২ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।এটিও অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ বা অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ হতে পারে। যৌবনের পরে, বেশিরভাগ মেয়েদের মাসিক চক্র নিয়মিত হয় এবং প্রতিটি মাসিকচক্রের মধ্যে সময়ের দৈর্ঘ্য একই রকম থাকে।


তবে যৌবনের পরে কিছু মেয়েদের ক্ষেত্রে, মাসিক চক্রের সময় এবং রক্তপাতের পরিমাণ অনেক পরিবর্তিত হয়। এটি অনিয়মিত মাসিক হিসাবে পরিচিত। বিবাহিত বা অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারন বা অনিয়মিত মাসিক হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ গুলো হলোঃ

  • রক্তশল্পতা বা রক্তশুন্যতার কারনে বা অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে মাসিক বন্ধ থাকে।
  • হরমোনের ভারসাম্যের কারনেও মাসিক মিসিং /বন্ধ থাকে ।
  • থাইরয়েড সমস্যার কারনে মাসিক বন্ধ থাকে।
  • মানুসিকতার কারনেও মেয়েদের মাসিক মিসিং হয়ে থাকে।
  • ওভারিয়ান সিস্ট হলে দির্ঘদিন মাসিক বন্ধ থাকে।

এছাড়াও, শারীরিক ও মানসিক জটিল কোন সমস্যা, অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়া বা অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ হতে পারে। এতএব, এর সঠিক কারন জেনেই চিকিৎসা নিতে হবে। 

যদি, আপনার কোন জটিল সমস্যা না থাকে, তাহলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে, অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া ঔষধ গুলো ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষায়ক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত, এই প্রাকৃতিক ভেষজ গুলো, অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এগুলো খাওয়ার তেমন কোন সাইড ইফেক্ট নাই।

তবে, যদি কারো কোন জটিল সমস্যা থাকে! তাহলে, মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে করণীয় হিসেবে, একজন গাইনি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেওয়া উচিত হবে।


আরও পড়ুন

অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায়। অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া ঔষধ।

নিয়মিত পিরিয়ডের তারিখ গণনা

অনেক সময়ই মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়া বা অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যা কিছু ঘরোয়া প্রতিকারে সমাধান হয়ে যায়। অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় বা অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ হিসেবে এই ভেষজ খাবার গুলো খেলে দুই/এক মাসেই এর ফল পেতে পারেন। ঘরোয়া প্রতিকার গুলো জেনে নিন।

#১। অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া প্রতিকার - আদা

মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে করণীয় হিসেবে আদা খাওয়া অনেক উপকারি। আদা মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক ঠিক করার পাশাপাশি পিরিয়ড চলাকালীন পেটের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।

এজন্য, আধা চা চামচ আদা কুঁচি এক কাপ পানিতে ৬ থেকে ৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপরে এতে সামান্য চিনি বা মধু মেশান। এরপর মিশ্রণটি ছেঁকে নিন। এভাবে, দিনে তিনবার করে এই মিশ্রণটি এক মাস খান।খুব দ্রুতই আধা খাওয়ার মাধ্যেমে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় এবং মাসিকের ব্যাথা কমানোর ঔষধ পেয়ে যাবেন।

#২। অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ হিসেবে তুলসি পাতা

অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে এক চামচ তুলসি পাতার রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিন, সাথে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে পারেন। এভাবে দিনে দু’বার করে খেতে পারেন। কিছুদিন খাবার পর ফলাফল দেখুন। এটি অনিয়মিত মাসিকের ভেষজ ঔষধ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।

#৩। অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হলুদ

মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে করণীয় হিসেবে হলুদ খেতে পারেন। হালকা গরম দুধের সাথে ১/৪ (এক চামচের চার ভাগের এক ভাগ) চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মেশান। হালকা গরম থাকতেই মিশ্রণটি খেয়ে নিন। প্রতিদিন এই খাবারটি খেলে অবশ্যই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।

#৪। অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া প্রতিকার - দারুচিনি

অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ হিসেবে দারুচিনি আরেকটি ভালো ভেষজ। দারুচিনি, অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি, মাসিক চলাকালীন পেটের ব্যথাও কমাতে ভালো কাজ করে। 

এজন্য, আধা চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া, দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। অথবা আপনি নিয়মিত চায়ের সাথে দারচিনি দিতে পারেন। এভাবে কিছুদিন নিয়মিত দারচিনি খেলে, অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ থাকলে বা অনিয়মিত মাসিক হলে তা দ্রুত নিয়মিত হতে শুরু করবে।

আরও পড়ুন

#৫। অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ হিসেবে ধনে

বিবাহিত বা অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে করণীয় হিসেবে ধনে খেতে পারেন। এটি অনিয়মিত মাসিকের ভেষজ ঔষধ হিসেবে কার্যকরী। ধনে খাওয়ার জন্য, দুইকাপ পানিতে এক চা চামচ আস্ত ধনে দিয়ে, অল্প আঁচে পানিটা ফুটিয়ে নিতে থাকুন, যতক্ষণ না সেটা অর্ধেক হচ্ছে। পিরিয়ডের তারিখ আসার আগের সপ্তাহ থেকে দিনে তিনবার এই পানি খান। আশা করি এভাবে কিছু দিন খেলে আপনার পিরিয়ড নিয়মিত হবে।

#৬। অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া প্রতিকার - তিল ও গুড়

অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে তিল ও গুড় খাওয়া উপকারি। এজন্য, এক মুঠো তিল টেলে নিন, তারপর এক চামচ গুড় এর সাথে তিল মিশিয়ে বাটতে হবে। এই মিশ্রণটি প্রতিদিন খালি পেটে খেতে হবে।এভাবে কয়েক দিন খেলে ভালো ফল পাবেন।

#৭। অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় - করলার রস

অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে করলার রসও বেশ কার্যকরী। দিনে একবার বা সম্ভব হলে দুবার করলার রস খান, এভাবে টানা কয়েক সপ্তাহ খেলে কার্যকর ফল পাবেন। এছাড়াও করলার রস ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে বেশ ভালো উপকারী।

#৮। অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ হিসেবে গাঁজর

অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে গাঁজর খাওয়া অনেক উপকারি। গাঁজর আয়রনের একটি ভালো উৎস যা শরীরের হরমোন ফাংশনকে সঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে। অনিয়মিত পিরিয়ড বা মাসিকের এর ক্ষেত্রে এক গ্লাস গাঁজরের রস প্রতিদিন খেতে হবে তিনমাস পর্যন্ত।এভাবে খেলে মেয়েদের অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যার সমাধান হবে।

#৯। অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া প্রতিকার - কুঁচি ধনেপাতা

অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া সমাধান হিসেবে কুঁচি ধনেপাতা খেতে পারেন।ধনেপাতার রস পিরিয়ড সমস্যার সমাধানে খুব উপকারী। ধনেপাতার রস খেতে না পারলে, ভাতের সাথে ধনেপাতা বাটা খেতে পারেন।এভাবে নিয়মিত কিছু দিন ধনে পাতার রস খেলে মেয়েদের মাসিকের সমস্যা সমাধান হবে।

#১০। অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ হিসেবে ভিটামিন সি

অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খুবই জরুরি। মাসিকের আগের সপ্তাহ থেকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান। অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার তালিকা দেখে খাবার খান। খাবারে বেশি ভিটামিন সি খেলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর হবে।

#১১। অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় -পুদিনা পাতা

মেয়েদের মাসিক বন্ধ হলে করণীয় হিসেবে পুদিনা পাতা খেতে পারেন। একচামচ মধুর সাথে পুদিনা পাতার রস মিশিয়ে দিনে তিনবার করে খেতে হবে একটানা কয়েক সপ্তাহ।এভাবে কয়েক সপ্তাহ খেলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা সমাধান হবে।

অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে, উপরে উল্লেখিত ভেষজ গুলো অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করলে, আপানারা দ্রুতই অনিয়মিত মাসিকের সমস্যার সমাধান পাবেন। 

অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে কিছু টিপস

অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে আরও যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিতঃ

  • নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা

  • স্বাস্থকর খাবার খাওয়া
  • ধূমপান বা অন্য কোন এলকোহল পানীয় না খাওয়া ইত্যাদি

আরও পড়ুন

আমাদের শেষ কথা

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ এবং অনিয়মিত মাসিক কেন হয়? তা জানানোর পাশাপাশি আজকে আমরা আপনাদের জানালাম, অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায়। যার মধ্যে কিছু কার্যকর ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক ভেষজ রয়েছে, যেগুলো অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে, অনেকেই বন্ধ মাসিক বা অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করেছেন।

তবে, উপরে মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার বা অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে যেসব ভেষজ এর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো নিতান্তই ঘরোয়া সমাধান। আপনার বড় কোন শারীরিক সমস্যা না থাকলে হয়তো দুতিন মাসেই এর ফলাফল পাওয়া যাবে। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে যদি আপনার অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে বা মাসিক বন্ধ থাকে তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

আপনি সুস্থ থাকুন। নিজেকে এবং পরিবারকে ভালো রাখুন। এই বিষয়ে আরও কিছু জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url