অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার কার্যকর উপায়
অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায় এবং অনিয়মিত মাসিক কেন হয় তা নিয়ে আজকে আপনাদের জানাবো। এছাড়া একজন নারীর গর্ভধারন কখন এবং কিভাবে ঘটে এবং অনিয়মিত মাসিক হলে গর্ভধারণ করার কি কি উপায় নিতে হবে তা বিস্তারিত বলবো। বর্তমানে মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিতি মাসিক একটি কমন সমস্যা। এর নানাবিদ ক্ষতিকর দিকের মধ্যে রয়েছে গর্ভধারনে ব্যার্থতা।
তাই অনেকেই অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায় নিয়ে চিন্তিত। কিছু কার্যকর চেষ্টার করে অনিয়মিত মাসিক হলেও বাচ্চা নেয়া সম্ভব। মূলত এর জন্যই আপনদের আগে জানতে হবে অনিয়মিত মাসিক কেন হয় এবং গর্ভধারন কখন ও কিভাবে হয়। তাহলে আপনাদের অনিয়মিত মাসিক হলেও বাচ্চা নেওয়ার উপায় গুলো বুঝতে সুবিদা হবে।
আজকে যা জানাবো
- অনিয়মিত মাসিক কেন হয় বা অনিয়মিত মাসিকের কারণ কি?
- গর্ভধারন কখন এবং কিভাবে ঘটে?
- অনিয়মিত মাসিক হলে গর্ভধারন কিভাবে হয়?
- অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায়
অনিয়মিত মাসিক কেন হয় বা অনিয়মিত মাসিকের কারণ কি ?
অনেকেই জানেন না যে, মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয়? অনেক কারনে মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। এছাড়া সঠিক পুষ্টির অভাব, শারীরিক চাপ এবং অতিরিক্ত ব্যায়াম করার কারনে মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। এছাড়াও নিষ্ক্রিয় থাইরয়েড গ্রন্থি, অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজনের থাকার কারণে মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো অনিয়মিত জন্মবিরতিকরন পিল খাওয়া এবং অতিরিক্ত ইমারজেন্সি জন্মবিরতিকরন পিল খাওয়া। এজন্য স্বল্পমাত্রার জন্মবিরতিকরন পিল খাওয়ার নিয়ম ও ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম মেনে পিল খাওয়া উচিত। আপনাদের যদি কারো অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে তাহলে প্রথেম উপরের কারণ গুলো থেকে খুঁজে বের করুন, আপনার অনিয়মিত মাসিক কেন হয়। তারপর অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায় ফলো করুন।
গর্ভধারন কখন এবং কিভাবে ঘটে?
আমরা হয়তো অনেকেই জানি না কখন কিভাবে গর্ভধারন ঘটে।এই বিষয় টি জানলে আমরা অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায় পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারবো। যেসব মেয়েদের নিয়মিত মাসিক হয় সেসব মেয়েদের ঋতুচক্র বা মাসিকচক্র সাধারানত ২৮ দিনের হয়। দুই-এক দিন এদিক-সেদিক হতে পারে। এদের ক্ষেত্রে এই ২৮ দিনের মধ্যে যেদিন মাসিক শুরু হয়, সে দিনের ৭ দিন পর থেকে শুরু করে ১৪ দিন পর্যন্ত, এই সময়ের মধ্যে সহবাস করেলে গর্ভধারন হওয়ার সম্ভবনা বেশি। একটি উদাহরণ দিলে আরও পরিষ্কার বুঝবেন। ধরুন একজনের মার্চ মাসের ১০ তারিখ মাসিক শুরু হলো, তার মাসিক শুরুর ৭ দিন পর থেকে শুরু করে ১৪ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ১৭ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত, এই সময়ের মধ্যে সহবাস করলে গর্ভধারন হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
এর কারণ এই সময়ে মেয়েদের ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়। সাধারণ অর্থে এই ডিম্বাণুর সাথে পুরুষের বীর্যে থাকা শুক্রাণুর মিলন হলে গর্ভধারন হয়। মেয়েদের এই ডিম্বাণু সাধারনত মাসিক চক্রের ১৩-১৫ তম দিনে নিঃসরিত হয়। এবং ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা গর্ভধারনের জন্য উর্বর থাকে। অন্যদিকে পুরুষের বীর্যে থাকা শুক্রাণু সহবাসের পর নারীর দেহে ৩-৫ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এবং নারীর ডিম্বাণু নিঃসরণ হলে তা পুরুষের শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত হলে গর্ভধারণ ঘটে। তাই যাদের নিয়মিত মাসিক হয় তাদের মাসিক শুরুর ৭ দিন পর থেকে, পরের ১০ দিন অর্থাৎ মাসিক চক্রের ৭-১৭ দিনের মধ্যে সহবাস করলে গর্ভধারণ ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
অনিয়মিত মাসিক হলে গর্ভধারন কিভাবে হয়?
মহিলাদের মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কোন মাসে এটি ২৮ দিন হতে পারে, যা স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার পরের মাসে এটি ৩১ দিন এবং তার পরের মাসে এটা ২৭ দিন হতে পারে। এগুলো স্বাভাবিক। তবে একটি মহিলা স্বাস্থ্য দপ্তরের বর্ণনা মতে অনিয়মিত মাসিক বলতে বুঝায়, যা ২১ দিনের কম বা ৩৫ দিনের বেশি হয়ে থাকে।
যখন আপনার অনিয়মিত মাসিক চক্র থাকে তখন গর্ভবতী হওয়া সম্ভব। কিন্তু এটি অনেকটা কঠিন হতে পারে যদি আপনার উর্বর ডিম্বাণু ছাড়াই মাসিক হয়। অনেকের ক্ষেত্রে ডিম্বস্ফোটন ছাড়াই মাসিকের মতো রক্তপাতও সম্ভব। আবার অনিয়মিত মাসিক হলে, ডিম্বস্ফোটন অনিয়মিত হতে পারে। আপনি প্রতি মাসে ডিম্বস্ফোটন নাও করতে পারেন অথবা আপনি মাসের বিভিন্ন সময়ে ডিম্বস্ফোটন করতে পারেন। আবার আপনার পিরিয়ডের মতো রক্তপাত ছাড়াই ডিম্বস্ফোটন হতে পারে।
এখন কথা হলো যদি আপনার প্রতি মাসে বা কোন মাসে অনিয়মিত মাসিকের মধ্যে উর্বর ডিম্বস্ফোটন না হয়, তাহলে আপনার গর্ভধারণ হওয়া সম্ভব হবে না। এর জন্য আপনার একজন পেশাদার ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়া উচিত।
অন্যদিকে, যদি আপনার প্রতিমাসে বা কোন মাসে উর্বর ডিম্বস্ফোটন হয়, তাহলে অনিয়মিত মাসিক হলে গর্ভধারণ করার কিছু উপায় অনুসরণ করলে আপনার গর্ভধারণের সম্ভবনা রয়েছে।
অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায়
১। নিয়মিত সহবাস করুন
আগেই আলোচনা করেছি, একটি সুস্থ ডিম্বাণু ১২-২৪ ঘণ্টা উর্বর থাকে এবং পুরুষের বীর্যে থাকা শুক্রাণু নারীদেহে ৩-৫ দিন কার্যকর থাকে। তাই আপনি যেহেতু নিশ্চিত নন, কবে আপনার ডিম্বাণু নিঃসরণ হতে পারে তাই প্রতি ৩ দিনে বা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একবার অরক্ষিত সহবাস করুন। সবচেয়ে ভালো হয় ১ দিন পর পর সহবাস করলে।
এক্ষেত্রে যখনই আপনার ডিম্বাণু নিঃসরণ হবে তখনই তা শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আপনার অন্য কোন জটিলতা না থাকলে, এই পদ্ধতিতে ২ থেকে ৩ মাস চেষ্টা করলে আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশ ভালো। এবং সহবাসের পর ৩০ মিনিট শুয়ে থাকা গর্ভধারণের পথ সুগম করে।
আরও পড়ুন
২। আপনার ডিম্বাণু নিঃসরণের সময় খুজে বের করুন
আপনার ডিম্বাণু নিঃসরণের সময় খুজে বের করুন। যখন আপনার ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়, সেই সময়ে সহবাস করলে তা গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু যখন আপনার অনিয়মিত মাসিক চক্র থাকে তখন ডিম্বাণু নিঃসরণের সময় খুঁজে পাওয়া কঠিন।
ডিম্বাণু নিঃসরণের সময় মেয়েদের শরীরে কিছু লক্ষণ রয়েছে। আর এই লক্ষণগুলো মাসে ১ বার, দুই একদিনের জন্য হতে পারে। যেমন আপনার যোনী পথে লালা পাতলা ও পিচ্ছিল হবে। আপনার শরীরের তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি বেড়ে যাবে এবং আপনি গরম অনুভব করবেন। আপনি একটু খেয়াল করে লক্ষণ গুলো বুঝতে পারলে, পর পর ২/৩ মাস সেই সময়ে সহবাস করলে আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকবে।
আরও পড়ুন
- গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ ও করনীয়
- নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় ও লক্ষণ। গর্ভবতীর করনীয় কি?
৩। স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখুন
যদি আপনার ওজন অতিরিক্ত কম হয়, তাহলে আপনাকে আপনার ওজন বাড়াতে হবে। এজন্য ওজন বাড়ানোর উপায় ফলো করুন। অন্যদিকে, যদি আপনার ওজন অতিরিক্ত বেশি হয়, তাহলে মেয়েদের ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায় ফলো করুন। কারণ ওজন কম বা বেশি হলে অনিয়মিত মাসিকের পাশাপাশি আপনার গর্ভধারণের ব্যর্থতা তৈরি করে।
৪।সুষম খাদ্য খান
স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে ফল, সবজি এবং শস্য খাওয়ার চেষ্টা করুন। উচ্চ মাত্রার ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। সুষম খাদ্য আপনার হরমনের ভারসম্যতা বজায় রাখবে যা আপনার অনিয়মিত মাসিক এবং অনিয়মিত ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ করতে পারে। ফলে আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়বে।
আরও পড়ুন
৫। নিয়মিত ব্যায়াম করুন
সঠিক হরমোন নিঃসরণের জন্য এবং আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কারণ ব্যায়াম শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও, অতিরিক্ত ব্যায়াম উর্বরতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই শরীর এবং নিয়মিত মাসিক চক্রের জন্য পরিমিত ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
৬। প্রজনন-বর্ধক ঔষধ
আপনি একজন পেশাদার গাইনি ডাক্তারের কাছ থেকে নিয়মিত মাসিক চক্র ফিরিয়ে আনা, উর্বরতা বাড়ানো এবং ডিম্বস্ফোটনের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি সহ এই সংক্রান্ত জতিলতার ঔষধ পেতে পারেন। এ জন্য আপনাকে একজন ভালো গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হবে এবং অনিয়মিত মাসিকের ঔষধ সহ আপনার অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা নেয়া উচিত।
আরও পড়ুন
আমাদের শেষ কথা
আজকে আমরা আপনাদের জানালাম, অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায় এবং অনিয়মিত মাসিক কেন হয়। এছাড়া নিয়মিত মাসিক হলে গর্ভধারণ কখন ও কিভাবে ঘটে এবং অনিয়মিত মাসিক হলে গর্ভধারণ কিভাবে ঘটে তা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করছি। আশা করি এগুলো জেনে আপনাদের অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার জন্য কি কি উপায় নিতে হবে তা বুঝতে পেরেছেন।
কোন কিছু পাওয়ার জন্য মানুষের চেষ্টা করতে হয়। তাই অনিয়মিত পিরিয়ড হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায় হিসেবে উপরের আলোচিত পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। হয়তো এর মাধ্যমে আপনাদের দাম্পত্য জীবনে আসতে পারে একজন নতুন সদস্য। যে কিনা হতে পারে আপনাদের আনন্দের কেন্দ্র বিন্দু।
এ বিষয়ে আরও কিছু জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।