মুখ ফর্সা করার কার্যকর ১০ টি ঘরোয়া উপায়
মুখ ফর্সা করার উপায় বা মুখ ফর্সা হওয়ার উপায় নিয়ে আজকে আমরা আপনাদেরকে জানাবো। জন্মগত ভাবে আমাদের একেক জনের ত্বক কালো কিংবা ফর্সা হয়ে থাকে। যাদের মুখের ত্বক ফর্সা থাকে তাদেরও প্রতিদিন রোদের তাপে ও ধুলাবালির কারণে মুখের কালো দাগ ও ত্বক কালচে হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ মুখের ত্বকের সঠিক যত্ন না নেওয়া।
অনেকে আবার বাজারে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করেন অথবা বিউটি পার্লারে গিয়ে মুখ ফর্সা হওয়ার নানা উপায় ব্যবহার করেন। এতে স্থায়ীভাবে মুখের ত্বকে ব্রণ সহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। যার ফলে তাদের ত্বক পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
অথচ মুখের ত্বক ফর্সা ও উজ্জল করার অনেক ভালো ও নিরাপদ ঘরোয়া উপায় রয়েছে। যেগুলোর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং অনেক মানুষ ব্যবহার করে মুখের ত্বক সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গার কালো ত্বক ফর্সা ও সুন্দর করেছেন। তাহলে আসুন জেনে নেই মুখের ত্বক ফর্সা ও সুন্দর করার ঘরোয়া উপায় গুলো।
মুখ ফর্সা করার কার্যকর ১০ টি ঘরোয়া উপায়
এখন আমরা আলোচনা করবো মুখ ফর্সা হওয়ার সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ ১০ টি ঘরোয়া উপায়। যেগুলো আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন এবং এগুলো আপনি স্বল্প খরচেই করতে পারবেন। তাহলে চলুন দেরী না করে শুরু করি।
১। মুখ ফর্সা হওয়ার উপায় - হলুদ ও লেবুর ব্যবহার।
মুখ ফর্সা করার উপায় হিসেবে এই প্যাকটি তৈরি করতে আপনার প্রয়োজন হবে ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়া বা কাঁচা হলুদ বাটা এবং ২ চা চামচ লেবুর রস। প্রথমে এই দুটি উপাদান একটি পাত্রে রেখে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর আপনার মুখের ত্বকে যেসব স্থানে কালচে হয়ে গেছে সেসব স্থানে ব্যবহার করুন। একবার ব্যবহার করার পর ১৫ মিনিট রেখে দিন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে নিন।
এই প্যাকটি আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে এক থেকে দুই মাস ব্যবহার করার পর আপনার মুখের ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হতে দেখবেন। তাই ছেলেদের বা মেয়েদের মুখের কালো ত্বক ফর্সা ও সুন্দর করতে এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
আরও জানুনঃ
২। মুখ ফর্সা হওয়ার উপায় - মধু ও লেবুর রসের ব্যবহার।
মুখের কালচে ভাব দূর করার জন্য এবং স্থায়ীভাবে মুখ ফর্সা ও সুন্দর করার উপায় হিসেবে এই প্যাকটি অত্যন্ত কার্যকর। এই প্যাকটি ব্যবহার করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ২ চা চামচ মধু এবং ২ চা চামচ লেবুর রস। এই দুটি উপকরণ একটি পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর তা মুখের ত্বকে ভালোভাবে মেখে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। প্যাকটি ব্যবহারের এক থেকে দুই মাসের মধ্যে আপনি এর ফল পেতে শুরু করবেন।
৩। মুখ ফর্সা করার উপায় - টমেটো ও মধুর ব্যবহার।
স্থায়ীভাবে মুখের ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল করার জন্য এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে একটি টমেটো ও চার চামচ মধু নিতে হবে। একটি পাত্রে আগে টমেটো ভালো করে চটকে নিবেন। তারপর চটকানো টমেটোর মধ্যে চার চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নেবেন।
মেশানো প্যাকটি ভালো ভাবে মুখে মেখে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন এবং এক থেকে দুই মাস ব্যবহারের পর মুখের কালচে দাগ দূর হবে।
- সহজে ওজন কমানোর ১৮ টি ঘরোয়া উপায়
- কোন ইমার্জেন্সি পিল সবচেয়ে ভালো। ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম।
৪। মুখ ফর্সা করার উপায় - দুধ ও মধুর ব্যবহার।
মুখের ত্বক ফর্সা করার জন্য দুধ ও মধুর প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য প্রয়োজন হবে ১ টেবিল চামচ দুধ এবং ১ চামচ মধু। প্রথমে একটি পাত্রে দুধ ও মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নেবেন। তারপর মেশানো প্যাকটি ভালোভাবে আপনার মুখের ত্বকে লাগিয়ে নিবেন। প্যাকটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর, শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নেবেন।
এই প্যাকটি আপনি চাইলে প্রতিদিন ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটা আপনার ত্বক ফর্সা ও উজ্জল করবে। কারণ দুধে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যেগুলো আমাদের ত্বকের ভেতর থেকে রং ফর্সা করে।
৫। মুখ ফর্সা করার উপায় - মধু ও দই এর ব্যবহার।
মুখের কালচে রং দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও সুন্দর করার জন্য এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ২ টেবিল চামচ টক দই ও ১ চামচ মধু। প্রথমে এই দুটি উপাদান ভালোভাবে একটি পাত্রে মিশিয়ে নেবেন। এরপর মিশ্রণটি মুখের ত্বকে ব্যবহার করে ১৫ মিনিট রেখে দিবেন। ১৫ মিনিট পর পরিষ্কার পানিতে মুখ ধুয়ে নেবেন।
এই প্যাকটি মুখের ত্বককে ফর্সা করতে অনেক ভালো কাজ করে। কারণ দইয়ে থাকা উপাদান আমাদের ত্বকের ক্ষুদ্র লোমকূপে জমে থাকা ময়লা দূর করে এবং ভেতর থেকে আমাদের ত্বক ফর্সা করে। তাই ছেলেদের বা মেয়েদের মুখের কালো ত্বক ফর্সা ও সুন্দর করতে এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
৬। মুখ ফর্সা হওয়ার উপায় - টমেটো ও লেবুর রসের ব্যবহার।
মুখ ফর্সা করার উপায় হিসেবে আপনি টমেটো ও লেবুর রসের ব্যবহার করতে পারেন। অনেকে এই প্যাকটি ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন। এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য আপনাকে দুটি টমেটো ব্লেন্ড করে রস করে নিতে হবে। এরপর ২ চা চামচ টমেটো রসের সাথে সাথে ২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নেবেন। মেশানো প্যাকটি আপনার মুখে মেখে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
আপনি চাইলে এই প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। তবে সপ্তাহে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলে, এক থেকে দুই মাসের মধ্যে আপনার মুখের ত্বকের রোদে পোড়া কালো দাগ সহ অন্যান্য দাগ কমিয়ে, ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করবে। এছাড়া লেবু মুখ ফর্সা করার উপায় হিসেবে ব্যবহারে পাশাপাশি মুখের ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে কাজ করে।
৭। মুখ ফর্সা করার উপায় - অ্যালোভেরা ও বাদামের গুড়ার ব্যবহার।
মুখ ফর্সা করার উপায় হিসেবে আপনি অ্যালোভেরা জেল ও বাদামের গুঁড়ো মিশিয়ে এই প্যাকটি তৈরি করতে পারেন। এটি তৈরি করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে অ্যালোভেরা পাতা থেকে কিছু জেল এবং কয়েকটি বাদামের গুঁড়া। প্যাকটি তৈরি করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ও বাদামের গুড়া একটি পাত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে নেবেন।
তারপর প্যাকটি আপনার মুখে লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন এরপর শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। অ্যালোভেরা জেল আমাদের মুখের ত্বক সহ শরীরের ত্বক ফর্সা করার পাশাপাশি নানা রকম চর্মরোগ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি মুখে ব্ল্যাকহেডস দূর করে। তাই আপনি মুখ ফর্সা করার জন্য এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
৮। মুখ ফর্সা করার উপায় - ডিমের ব্যবহার।
মুখের ত্বক ফর্সা করার উপায় হিসেবে অনেকেই ডিমের ব্যবহার করে থাকেন। এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ১ থেকে ২ টি ডিম। প্রথমে ১ থেকে ২ টি ডিম ভেঙে, ডিমের কুসুম নিয়ে ভালো করে সেটি সারা মুখে লাগিয়ে নিবেন। এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাকটি মুখের ত্বকের ভেতর থেকে কালো দাগ দূর করে। তাই আপনি এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে কিছুদিনের মধ্যে মুখের ত্বকে উজ্জ্বলতা ও ফর্সা দেখতে পাবেন। তাই ছেলেদের বা মেয়েদের মুখের কালো ত্বক ফর্সা ও সুন্দর করতে এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
৯। মুখের ত্বক ফর্সা হওয়ার উপায় - দুধ ও কলার ব্যবহার।
মুখের ত্বক স্থায়ীভাবে ফর্সা করার উপায় হিসেবে আপনি এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি কলা এবং পরিমাণ মতো কিছু দুধ। প্রথমে একটি পাত্রে কলাকে ভালো করে চটকে নিবেন বা ব্লেন্ড করে নিবেন। তার সাথে পরিমাণ মতো দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে নিবেন।১০। মুখ ফর্সা হওয়ার উপায় - ডাবের পানির ব্যবহার।
মুখ ফর্সা করার উপায় হিসেবে নিয়মিত ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। দিনে কমপক্ষে দুবার যদি আপনি ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন তাহলে মুখ ফর্সা হতে একদমই সময় লাগে না। মুখের কালো দাগ সহ অন্যান্য দাগ দূর করতে এই ঘরোয়া পদ্ধতি অনেক ভালো কাজ করে।
মুখের ত্বক ফর্সা হওয়ার জন্য কিছু টিপস।
উপরে আলোচিত কয়েকটি প্যাক ব্যবহার পাশাপাশি, নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করলে, আপনারা মুখ ফর্সা হওয়ার জন্য আরো ভাল ফলাফল পাবেন। তাই নিচের টিপসগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
১। নিয়মিত প্রচুর পানি পান করুন। কারণ পানি শরীরকে সতেজ করে।
২। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। রাত জাগা বন্ধ করুন যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এটি মুখের উজ্জলতা নষ্ট করে।
৩। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করুন। কারন মিষ্টি জাতীয় খাবার চামড়ায় টানটান ভাব ফেলে। এর ফলে মুখের ত্বক কুঁচকে যায়।
৪। প্রতিদিন প্রতিদিন মুখের যত্ন নিন। বাইরে থেকে এসে এবং প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পানি দিয়ে হলেও অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করে নিবেন।
৫। অবশ্যই সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মুখের ত্বক পরিষ্কারের জন্য ত্বকের বিশেষ যত্ন নেবেন। অনেকে দীর্ঘদিন মুখের ত্বকের কোনো যত্ন না নেওয়ার কারণে মুখের কালো দাগ পরে ও ত্বক কালচে হয়ে যায়।
আরও জানুন
আমাদের শেষ কথা
সবশেষে আমরা আপনাদের একটি কথাই বলতে চাই, মুখ ফর্সা করার উপায় বা মুখ ফর্সা হওয়ার উপায় হিসেবে আপনারা বাজারে ব্যবহৃত কেমিক্যালযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করবেন না। এর পরিবর্তে উপরের আলোচিত মুখ ফর্সা ও সুন্দর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে দুই-একটি বা তারও বেশি উপায় আপনি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং মুখের ত্বকের কোনো ক্ষতি হয় না।কিন্তু আপনি কেমিক্যাল যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করলে মুখের ত্বকে নানা ধরনের ব্রণ সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। উপরের আলোচিত পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে আমাদেরকে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন, কোন পদ্ধতিটি আপনার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি ভালো কাজ করেছে।