কিডনি রোগের কার্যকর ১২ টি ঘরোয়া চিকিৎসা

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে আজকে আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো। আমরা সকলেই জানি কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কারণ কিডনি আমাদের শরীর থেকে রক্তের মধ্যে থাকা দূষিত বর্জ্য প্রসাবের সাথে বের করে দেয়। যখন একজন মানুষের কিডনির সমস্যা দেখা দেয় তখন ধীরে ধীরে তার কিডনি বিকল হতে শুরু করে।

অনেক কিডনি রোগীর কিডনি ৫০% অকার্যকর হয়ে যাওয়ার আগে তারা কোন লক্ষনই টের পান না। যার ফলে অনেক মানুষই আজকাল কিডনি রোগে মারা যাচ্ছে। অথচ কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো খেয়াল রেখে, সামান্য কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা করলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অনেক কিডনি রোগী এই কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো ব্যবহার করে দীর্ঘদিনের কিডনির সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কারণ এই ঘরোয়া চিকিৎসা গুলোর মধ্যে রয়েছে কিডনি রোগের ভেষজ ঔষধ বা ভেষজ চিকিৎসা।



কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা


কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা বা ভেষজ ঔষধ কেন ব্যবহার করবেন?

আমরা সকলেই জানি বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের ভেষজ চিকিৎসা বহু বছর ধরে হাজারো মানুষ ব্যবহার করে আসছে এবং তারা সুস্থ জীবন যাপন করছে। এছাড়া কিডনি রোগে ভেষজ চিকিৎসা বা ঘরোয়া চিকিৎসা অত্যন্ত কম খরচে করা সম্ভব। তাই আপনারা যারা কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা এবং কিডনি রোগের ভেষজ ঔষধ খুঁজছেন, তাদের জন্য নিচের পরামর্শগুলো দেয়া হলো।


এ বিষয়ে আপনার আরও যা জানার প্রয়োজন হতে পারে।


কিডনি রোগের কার্যকর ১২ টি ঘরোয়া চিকিৎসা।


কিডনির সমস্যা অনেকগুলো কারণে হতে পারে। কারণ কিডনির নানা ধরনের রোগ রয়েছে। এসকল রোগের জন্য নিচের আলোচিত কিডনি রোগের ভেষজ ঔষধ গুলো কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। মেডিকেল চিকিৎসার পাশাপাশি আপনারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েও এই ভেষজ চিকিৎসা গুলো ব্যবহার করতে পারেন

১। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - পিঁয়াজের ব্যবহার।

কিডনি ভালো রাখতে অন্যতম একটি উপাদান হল পিঁয়াজ। পিঁয়াজ রক্তের চর্বি দূর করে, কিডনির জন্য ক্ষতিকর পদার্থ গুলো নষ্ট করে, কিডনি পরিশোধনে সহায়তা করে এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ রোধ করে। এছাড়া পেঁয়াজের রয়েছে পটাশিয়াম যা কিডনির জন্য বেশ উপকারী। তাই প্রতিদিন খাবারে একটি-দুটি কাঁচা পেঁয়াজ রাখুন। কিডনি ভালো রাখার উপায় হিসেবে কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারেন।

২। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - রসুনের ব্যবহার।

কিডনির ইনফেকশন দূর করতে রসুন অনেক ভালো কাজ করে। রসুনে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি কিডনি ইনফেকশনের উপসর্গ সারিয়ে তোলে। পাশাপাশি কিডনিকে সুস্থ রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে রসুন সাহায্য করে। রসুন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। তাই কিডনি রোগের ভেষজ চিকিৎসা হিসেবে প্রতিদিন কয়েক কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন।এতে আপনার কিডনির ইনফেকশন দূর হবে।

৩। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - আদার ব্যবহার।

অনেক রোগের মহৌষধ হচ্ছে আদা। রক্তে সুগারের মাত্রা অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে কিডনিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং কিডনি রোগ তৈরি করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে আদা আমাদের রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আদা খেলে কিডনি ভালো থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় হিসেবে আদা খেতে পারেন।

এছাড়া আদা আপনার কিডনি সমস্যারও সমাধান করে। কিডনির রক্ত চলাচল বাড়িয়ে কিডনিকে সচল ও সুস্থ রাখতে আদা অত্যন্ত কার্যকর। তাই প্রতিদিন নিয়মিত কাঁচা আদা, আদা গুড়া বা আদার জুস খেতে পারেন।

৪। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - আপেলের ব্যবহার।

আপেল কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার তা আমরা প্রচলিত বাক্যটি থেকে অনুধাবন করতে পারি। সকলেই হয়তো শুনেছেন, “প্রতিদিন একটি আপেল খান ডাক্তার থেকে দূরে থাকুন” এই বাক্যটি। কিডনির ক্ষেত্রে কথাটি অনেক কার্যকর। আপেল একটি উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার। যাতে পলিফিনল নামের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি আছে, যা দূষিত পদার্থ দূর করে কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে।

কিডনির পাথর দূর করতে আপেল খুব ভালো কাজ করে। আপেলের রস কিডনির পাথর নরম এবং ছোট করে কিডনি থেকে বের করে দেয়। এছাড়া আপেল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদরোগসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমায়। তাই কিডনির পাথর দূর করতে প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দুইটি আপেল বা আপেলের জুস খেতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ


৫। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - লেবুর রসের ব্যবহার।

কিডনির পাথর দূর করার উপায় হিসেবে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। অনেকেই প্রাকৃতিক উপায় অপারেশন ছাড়া কিডনির পাথর দূর করতে চান। এক্ষেত্রে আপনারা কিডনি পাথরের ঔষধ হিসেবে, লেবুর রস ও অলিভ অয়েল এর মিশ্রণ খেতে পারেন। এর ফলে কিডনির পাথর গলে যাবে। প্রতিদিন নিয়ম করে এই মিশ্রণটি অল্প পরিমাণে খেয়ে দেখতে পারেন।

৬। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - হলুদের ব্যবহার।

হলুদ মসলা হিসেবে খুবই উপকারী একটি খাবার। কিন্তু এতে রয়েছে অত্যন্ত উপকারী কিছু অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান, যা কিডনি ইনফেকশন দূর করে। তাই নিয়মিত রান্নায় হলুদ ব্যবহার করা উচিত। তবে অবশ্যই কিডনিতে পাথর হলে অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খাবেন না।

৭। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - পরিমিত পানি পান করা।

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এটা কিডনি রোগের কোণ নতুন চিকিৎসা নয়। যুগ যুগ ধরে কিডনি সমস্যা সমাধানে পরিমিত পানি পান করার কথা বলা হচ্ছে।

আমাদের শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে, নিয়মিত পানি পান করতে হবে। পানির মাধ্যমে কিডনি থেকে টক্সিন সহ নানা সংক্রামক উপাদান বের হয়ে যায়। তাই আপনাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

৮। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা – বাঁধাকপির ব্যবহার।

আমরা কিডনি রোগীর খাবার তালিকার মধ্যে বাঁধাকপি কে গুরুত্ব সহকারে রেখেছি। কারণ বাঁধাকপিতে আছে ভিটামিন বি সিক্স, সি, কে, ফলিক এসিড এবং ফাইবার। এটি আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বাঁধাকপিতে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্র কে সুস্থ রাখে এবং নিয়মিত মলত্যাগ করতে সাহায্য করে। তাই কিডনি সুরক্ষায় নিয়মিত বাঁধাকপি খেতে পারেন।

কিডনি রোগের ভেষজ চিকিৎসায় বাধাকপি


৯। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - লাল আঙ্গুর এর ব্যবহার।

কিডনি সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি নিয়মিত লাল আঙ্গুর খেতে পারেন। লাল আঙুলে থাকা ফ্লাভনয়েড কিডনিকে রাখবে সুস্থ-সতেজ। এটি আমাদের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।


১০। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - মিষ্টি আলুর ব্যবহার।

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে মিষ্টি আলু খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। মিষ্টি আলুতে থাকা পটাসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ আমাদের শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ও ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং কিডনিতে খারাপ প্রভাব কমাতে ভালো কাজ করে। তাই কিডনি ভালো রাখতে নিয়মিত মিষ্টি আলু খেতে পারেন।

১১। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - ডালিম ও ভুট্টার গুড়ার ব্যবহার।

কিডনি পাথরের ভেষজ ঔষধ হিসেবে আপনি নিয়মিত ডালিম এবং ভুট্টার গুড়া খেতে পারেন। এতে থাকা প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান কিডনির পাথর থেকে মুক্তি লাভ করতে সাহায্য করে। পানির সঙ্গে ভুট্টার গুড়া মিশিয়ে খেলে কিডনির পাথর ধীরে ধীরে চলে যায়।

১২। কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - দারচিনি এর ব্যবহার।

দারুচিনি আমাদের কিডনি ফাংশন এর উন্নতি ঘটায়। প্রতিদিন কমপক্ষে এক ইঞ্চি পরিমাণ দারচিনি খেলে আমাদের কিডনির নানা সমস্যা দূর হয় এবং কিডনি ভালো থাকে।

আরও পড়ুনঃ

আমাদের শেষ কথা

কিডনি ইনফেকশন, কিডনির পাথর সহ নানা ধরনের কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে উপরোক্ত কিডনি রোগের ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন। অনেকে আবার কিডনি রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করে থাকেন। তবে আপনার যদি কিডনি সমস্যা জটিল হয় কিংবা আপনার যদি মেডিকেল ইমার্জেন্সি থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url