কিডনি ইনফেকশনের ১৩ টি লক্ষণ
আজকে আমরা আলোচনা করবো কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ অথবা কিডনি রোগের লক্ষণ নিয়ে। আপনারা সবাই জানেন কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই কিডনি ইনফেকশন বা কিডনি রোগ আমাদের শরীরের মারাত্মক রোগ গুলোর মধ্যে একটি। একজন মানুষের কাছে কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় বা কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হলো কিডনি রোগের লক্ষণ।
- কিডনি কি কাজ করে?
- কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ
- কিডনি ইনফেকশনের বা কিডনি রোগের লক্ষণ
- কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়
কিডনি কি কাজ করে?
কিডনি সমস্যা জানার আগে
আসুন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেই। কিডনির কাজ টা আসলে কি? কিডনি আসলে আমাদের
দেহের রক্ত পরিশোধনে ছাকনের কাজ করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি কিডনিতে আনুমানিক
১০ থেকে ১২ লক্ষ ছাকুনি থাকে, যা একদিনে প্রায় ১৭০ লিটারের মত রক্ত পরিশোধন করে এবং
প্রায় এক থেকে তিন লিটার এর মত বর্জ্য শরীর থেকে প্রসাবের আকারে বের করে দেয়।
যে সকল কিডনি রোগী কিডনি
সমস্যার কারনে ডায়ালাইসিস করেন, তারা জানেন ডায়ালাইসিস করার খরচ কত। তাই শুরুতেই
কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো বুঝে কিডনি সমস্যার চিকিৎসা করতে পারলে, শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ
অঙ্গটিকে রক্ষা করা সম্ভব।
কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারণে কিডনি রোগ হতে পারে। এরমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হূদরোগ, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, কিডনির জন্য ক্ষতিকর ওষুধ খাওয়া, ধূমপান, জন্মগত কিডনি সমস্যা, পরিবারের কারো কিডনি রোগ থাকলে ও ষাট বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তির কিডনি রোগ অথবা ক্রনিক কিডনি রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
কিডনি ইনফেকশনের বা কিডনি রোগের লক্ষণ
১/ প্রসাবে সমস্যা হওয়া
কিডনি রোগের বা কিডনি ইনফেকশনের
একটি অন্যতম লক্ষণ হলো প্রসাবে নানা ধরেনর সমস্যা হওয়া। এর মধ্যে প্রসাবের পরিবর্তন
হওয়া, প্রস্রাব বেশি অথবা কম হওয়া বিশেষ করে
রাতে এই সমস্যা বেশি হয়, এছাড়া প্রসাবের বেগ অনুভব হলেও প্রস্রাব ঠিকমতো না হওয়া,
প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া করার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
২/ প্রস্রাবের সাথে রক্ত
যাওয়া
কিডনি ইনফেকশনের বা কিডনি রোগের একটি অন্যতম জটিল লক্ষণ হলো প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া । প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এটি ক্রনিক কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে। এমন হলে দ্রুত একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।পাশাপাশি কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারেন।
৩/ সব সময় ক্লান্ত অনুভব করা
কিডনি রোগের আরেকটি লক্ষণ
হলো সব সময় ক্লান্ত লাগা। কাজকর্মের মন মানসিকতা কমে যাওয়া।কিডনির প্রধান কাজই হলো
রক্তকে বিশুদ্ধ করা। তাই কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে অপ্রয়োজনীয় জিনিসের পরিমাণ
বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলে শরীর ক্লান্ত লাগে। এ কারণে কিডনি রোগীর রক্তস্বল্পতা হতে
পারে।
৪/ ত্বকের সমস্যা
আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয়
লবণ ও ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্য ঠিক রাখা কিডনির আরেকটি প্রধান কাজ। ত্বকের সজীবতা
ঠিক রাখতে ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই উপাদানগুলো বড় ভূমিকা রাখে। কিডনি রোগের
কারণে ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। এছাড়া ত্বকে ঘা হতে পারে।
৫/ বমি ভাব বা বমি হওয়া
রক্তে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ
বেড়ে গেলে কিডনি রোগে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত বমি বা বমি বমি ভাব
কিডনি ইনফেকশনের একটি লক্ষণ হতে পারে।
৬/ ঘুম না হওয়া
কিডনি সঠিকভাবে কাজ না
করতে পারলে আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ গুলো মূত্রের সাথে দেহের বাইরে
বের হতে পারে না। এর ফলে কিডনি রোগীর ঘুমের সমস্যা হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেছেন,
কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর ঘুম না আসার সমস্যা সুস্থ মানুষের থেকে অনেক বেশি।
৭/ দেহ ফুলে যাওয়া
কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণগুলোর
মধ্যে অন্যতম হলো দেহে বিশেষ করে হাত, পা ও মুখ ফুলে যাওয়া। আগেই বলেছি কিডনি আমাদের
শরীর থেকে বর্জ্য ও অপ্রয়োজনীয় পানি বের করে দেয়। কিডনি রোগ হলে বাড়তি পানি শরীর
থেকে বের হতে পারে না এর ফলে হাত, পা ও মুখ ফুলে যায় অথবা শরীরে ফোলা ভাব তৈরি হয়।
৮/ পিঠের পেছনে ব্যথা
কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণগুলোর
মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হলো কিডনি রোগীর শরীরের পেছনে পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হওয়া।যদি
পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি কিডনি রোগের একটি লক্ষণ হতে পারে।
অনেকদিন এই ধরনের ব্যাথা চলতে থাকলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
৯/ অতিরিক্ত জ্বর ও খিচুনি হওয়া
কিডনি রোগের অন্যতম আরেকটি
লক্ষণ হলো অতিরিক্ত তাপমাত্রায় জ্বর হওয়া এবং জ্বরের সাথে কাঁপুনি হওয়া। কিডনির
ইনফেকশন যখন কিডনির নিয়মিত কাজে সমস্যা তৈরি করে তখন শরীরের অতিরিক্ত জ্বর ও কাঁপুনি
হয়।তাই অতিরিক্ত জ্বর ও খিচুনি হলে দ্রুত একজন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
১০/ শ্বাসকষ্ট হওয়া
কিডনি ইনফেকশনের কারণে
ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা হয়। এছাড়া শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা যায়। এর কারণে শ্বাস করতে
সমস্যা হয়। তাই কিডনি রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
১১/ শীত অনুভব হওয়া
কিডনি রোগীর শরীরে রক্ত
শূন্যতা তৈরি হয়। একারনে কিডনির সমস্যা হলে বেশি শীত অনুভত হয়। কিডনি ভালো আছে কিনা
বোঝার উপায় হিসেবে শরীরে শীত অনুভব হওয়াকে গুরুত্ব দিন।
১২/ খুদা না লাগা
সাধারণত মানুষ অসুস্থ হলে
তার খুদা কমে যায়। কিডনি রোগের লক্ষণের মধ্যেও এটি রয়েছে। কারো কিডনি সমস্যা হলে তার
খুদা কমে যাবে। এবং ক্রনিক কিডনি রোগ হলে সে একদমই খেতে চাইবে না।
১৩/ অসুস্থ বোধ করা
যখনই একজন মানুষের কিডনি
ইনফেকশন হয় বা কিডনির সমস্যা তৈরি হয়, তখন ধীরে ধীরে সে অসুস্থ বোধ করতে থাকে। মাঝে
মাঝে মাঝে তার মাথা ব্যথা হওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশের চুলকানি, শরীরের ওজন হঠাৎ কমে
যাওয়া কিংবা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়
নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরের অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমানো উচিত। যারা ধূমপান করেন তাদের ধূমপান বর্জন করা উচিত। প্রতিদিন পরিমাণ মতো পানি পান করা উচিত। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা উচিত ।খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা উচিত। প্রতিদিন বেশি পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত। কিডনি ইনফেকশনের বা কিডনি রোগের লক্ষণ টের পেলে কিডনি ভালো রাখার উপায় হিসেবে একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ওষুধ সেবন করা উচিত।
আরও পড়ুনঃআমাদের শেষ কথা
সাধারণত উপরে উল্লেখিত লক্ষণ গুলো কিডনি ইনফেকশনের বা কিডনি রোগের লক্ষণ হয়ে থাকে।এছাড়া আকস্মিক কিডনি ফেইলিওর বা কিডনি ড্যামেজের আরও লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আসল কথা হচ্ছে কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় হিসেবে আপনাকে কিডনি রোগের লক্ষণগুলোর বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান আমাদের কমেন্ট সেকশনে। এবং অবশ্যই পোস্টটি আপনার বন্ধুদেরে সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।