নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় ও লক্ষণ। গর্ভবতীর করনীয় কী?

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ ও নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় নিয়ে আজকে আপনাদের জানাবো। এছাড়া নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা, ডেলিভারির বিভিন্ন পর্যায়, ডেলিভারি ব্যথা শুরু না হলে করনীয় ও নরমাল ডেলিভারিতে কেমন ব্যাথা হয় এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো। 


নরমাল ডেলিভারি হওয়া একটি শিশু


আজকাল অনেক গর্ভবতী নারীই নরমাল ডেলিভারির ব্যাথা এড়ানোর জন্য সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারি করেন। কিন্ত, এতে সাময়িক নরমাল ডেলিভারির ব্যথা এড়ানো গেলেও সিজারের মতো একটা বড় সার্জারীর ক্ষত ও ভোগান্তি বয়ে বেড়াতে হয় আজীবন। 

অথচ যখন চিকিৎসা ব্যবস্থায় সার্জারী ছিলো না, তখন প্রাকৃতিক নিয়মে যুগ যুগ ধরে নারীরা নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করেছেন। বর্তমানে প্রায় এক তৃতীয়াংশ বাচ্চা সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি হচ্ছে এবং বাংলাদেশে এই হার দিন দিন বাড়ছে। 

ফলে একটা বিশাল সংখ্যক সিজারিয়ান অপারেশন করা নারী, জীবনে নানা ঝুকি ও কষ্ট নিয়ে জীবন পার করছেন। অথচ, প্রেগ্ন্যাসির প্রথম থেকে নরমাল ডেলিভারি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় গুলো ফলো করলে এই ঝুকি এড়ানো সম্ভব।

নরমাল ডেলিভারি কি?

সাধারন অর্থে, প্রাকৃতিক ভাবে ও স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেয়া কে নরমাল ডেলিভারি বলে। এই পদ্ধতিতে মেয়েদের মাসিকের রাস্তা বা ভ্যাজিনা থেকে বাচ্চা বাইরে চলে আসে। সাধারনত, প্রেগ্ন্যাসির ৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪১ সপ্তাহের মধ্যে নরমাল ডেলিভারি হয়। প্রথমে ডেলিভারি ব্যাথা শুরু হওয়া ও পানি ভাঙার পর, বাচ্চা গর্ভের পর্দা সরিয়ে বার্থ ক্যানেলের মধ্যে দিয়ে বাইরে চলে আসে। এসময় প্রচন্ড সংকোচন এর মাধ্যমে বাচ্চা কে বার্থ ক্যানেলের মধ্যে ঠেলে দিয়ে নরমাল বা ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি করতে হয়।

প্রথমে বাচ্চার মাথা বাইরে চলে আসে এবং পরে সম্পূর্ণ শরীর। নরমাল ডেলিভারির ব্যথা শুরু হওয়া থেকে এই পুরো প্রক্রিয়ার তিনটি পর্যায় রয়েছে, যা আমরা নিচে আলোচনা করেছি। নরমাল ডেলিভারির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হতে ৮ থেকে ১৩ ঘন্টা পর্যন্ত লাগতে পারে। তবে এটা নির্ভর করে প্রেগন্যান্ট নারীর শরীরের কন্ডিশনের উপর। এছাড়া ডেলিভারির নানা জটিলতায় আরো বেশি সময় লাগতে পারে।


নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা

বিভিন্ন কারনে সিজারিয়ান অপারেশনের এর চেয়ে নরমাল ডেলিভারি গুরুত্বপূর্ণ। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমনঃ

১। মা ও সন্তান দ্রুত সুস্থ হয়

নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে মা ও সন্তান দুজনেই দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। সাধারণত, বেশিরভাগ নরমাল ডেলিভারি বাসায় হয়। কিন্তু, হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি হলেও ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মা ও শিশুকে রিলিজ দেয়া হয়। অন্যদিকে, সিজারিয়ান ডেলিভারিতে ৫ থেকে ৭ দিন হাসপাতালে থাকতে হয় এবং মায়ের সুস্থ হতে ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

২। নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

সিজারিয়ান সেকশনের চেয়ে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্মলাভ করলে, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। নরমাল ডেলিভারির সময় শিশু যখন বার্থ ক্যানেল থেকে বের হয়, সেসময় কিছু উপকারি ব্যকটেরিয়া শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অন্যদিকে সিজারিয়ান ডেলিভারিতে এই উপকারী ব্যকটেরিয়া শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে শিশুর এ্যজমা, ঠান্ডা লাগা, স্থুলতা ও খাবারে এলার্জি সহ নানা রোগ দেখা দেয়।

৩। নবজাতকের শালদুধ সহ দুধ পানে সুবিধা হয়

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, নবজাতকের জন্য শালদুধের উপকারিতা অনেক। নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে, শিশুকে শাল দুধ সহ প্রথম থেকেই দুধ খাওয়ানো সহজ। অন্যদিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রায় ২/৩ দিনের মধ্যে শিশুকে দুধ খাওয়ানো সম্ভব হয় না। এসময় শিশুকে অন্যের দুধ বা বাজার থেকে কেনা দুধ খাওয়াতে হয়। ফলে শিশু উপকারী শাল দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। একারণেও নরমাল ডেলিভারিতে হওয়া শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে।

৪। বড় সার্জারী থেকে রক্ষা

আমাদের দেশে সিজারিয়ান অপারেশন কমন হয়ে গেলেও, এটি একটি বড় ধরনের ও জটিল সার্জারী। এই সার্জারীর সময় জীবনের ঝুঁকি থাকে। নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে এই সার্জারী থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সিজারিয়ান অপারেশনের ফলে একজন মাকে দীর্ঘদিন ব্যাথাসহ নানা জটিলতায় ভুগতে হয়। এছাড়া এই অপারেশনের সময় গর্ভবতী মাকে চেতনানাশক বা এনেস্থেশিয়া দিতে হয়, যা খুবই ঝুকিপূর্ন। নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে এসব ঝুকির কোন সম্ভাবনা নেই।

৫। বাচ্চার ফুসফুস ভালো থাকে

নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে বাচ্চা যখন বার্থ ক্যানেল দিয়ে বাইরে বের হয়, তখন তার বুকে জমে থাকা তরল অপসারণ হয়ে যায়। এর ফলে বাচ্চার ফুসফুস কর্যকর থাকে। অন্যদিকে সিজারের বাচ্চাদের অনেকেরই জন্মের পর শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। এজন্য তাদের অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া তাদের হাঁপানি, এ্যজমা ও স্থুলতা দেখা দেয়।

৬। পরবর্তি প্রেগ্ন্যাসির ঝুকি কম

সিজারিয়ান ডেলিভারির পর, পরবর্তী প্রেগ্ন্যাসির ঝুকি অনেক বেশি থাকে। প্রথমবার সিজার হওয়ার পর, প্রায় ৪৩% নারীর দ্বিতীয় বার বন্ধ্যত্বের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া দ্বিতীয় বার প্রেগন্যান্ট হলেও নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। প্রথমবার নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা হলে দ্বিতীয়বার এই সমস্যা থাকে না।

৭। নরমাল ডেলিভারির খরচ কম

সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের টাকা খরচ করতে হয়, অন্যদিকে নরমাল ডেলিভারিতে তেমন কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। তাই অনেক দিক থেকে সিজারিয়ান ডেলিভারির চেয়ে নরমাল ডেলিভারি অনেক উপকারী।


আরও জানুন


নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ


একজন গর্ভবতী নারী

১। শিশুর মাথা নিচের দিকে চলে আসা

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ৩৭ সপ্তাহ পারে শিশুর মাথা নিচের দিকে চলে আসে। এসময় শিশু পেটের নিচের দিকে অর্থাৎ পেলভিক অঞ্চলে চলে আসে। ফলে তলপেটে চাপ বাড়ে। এসময় বুকের নিচের অংশ কিছুটা ফাকা হয়। ফলে আগের থেকে বুক ভরে শ্বাস করা যায়।

২। পিঠের নিচের দিকে ব্যাথা

শিশুর মাথা নিচে নামায় এবং তলপেটের উপর চাপ বাড়ায়, পেশির সংকোচন বাড়ে। ফলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ হিসেবে পিঠের নিচের দিকে ব্যাথা অনুভব হতে পারে।

৩। ঘন ঘন মলত্যাগ

ডেলিভারির আগে বাচ্চা নিচের দিকে নামার কারনে মুত্রাশয়ের উপর চাপ বাড়ে। ফলে ঘন ঘন প্রসাব ও মলত্যাগের চাপ বাড়ে।

৪। যোনী থেকে সাদা স্রাব বৃদ্ধি পাওয়া ও রক্তপাত হওয়া।

নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ হিসেবে ডেলিভারির আগে যোনি থেকে সাদা স্রাব বৃদ্ধি পায়। এসময় সাদা ও গোলাপি রং এর স্রাব বাড়তে পারে। এছাড়া যোনী থেকে হালকা রক্তপাত শুরু হতে পারে।

৫। স্তনে ফোলাভাব ও ভারী হওয়া

ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসার আগে স্তনে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ হিসেবে এসময় স্তনে ফোলাভাব বাড়বে এবং স্তন ভারী হয়ে যাবে।

৬। অস্থিরতা বেশি হওয়া

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার আগে শরীরের নানা পরিবর্তনের কারনে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। এসময় কোন এক জায়গা বেশিক্ষন বসে থাকা বা শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে না।

৭। পানি ভাঙা

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ডেলিভারির আগে বা ডেলিভারির সময় পানি ভাঙাবে। এটা ডেলিভারি ব্যথা শুরু হওয়ার পরে বা আগে হতে পারে। তবে পানি ভাঙার সময় বা পরে ডেলিভারি পেইন শুরু না হলে এবং বাচ্চা ডেলিভারি হতে দেরি হলে, গর্ভবতী নারীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এসময় গর্ভবতী নারীর ৫ টি বিপদ চিহ্ন বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

৮। পেশীর সংকোচন ও তলপেটে গরম অনুভূতি হওয়া।

নরমাল ডেলিভারির লক্ষন হিসেবে ডেলিভারির আগে পেশির সংকোচন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া এসময় তলপেটে গরম অনুভূতি হবে।


আরও জানুন



নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় ১০ টি করণীয়।


একজন গর্ভবতী নারী ও তার স্বামী


নরমাল ডেলিভারির জন্য কি করতে হবে? একজন নারী প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর পরই নরমাল ডেলিভারির জন্য কার্যক্রম শুরু করা উচিত। এমন কিছু কাজ রয়েছে যা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে কাজ করে। সেগুলো হলোঃ

১। নিয়মিত ব্যয়াম করা

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে প্রেগন্যান্সির সময়ে নিয়মিত ব্যয়াম করা জরুরী। নিয়মিত ব্যয়াম করলে পেশী শিথিল হয়। অনেকেই প্রেগ্ন্যাসির সময় শুয়ে বসে থাকেন। যদি ডাক্তার আপনাকে বেড রেস্ট না দেন, তাহলে নিয়মিত হাটুন, টুকটাক কাজ করুন। মোটকথা, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে আপনার শরীরকে শিথিল করতে হবে।

২। সঠিক খাদ্যাভ্যাস

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য করণীয় হিসেবে প্রেগ্ন্যাসির পর থেকেই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। যেসকল খাবার মা ও সন্তানের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে যেমন, আয়রন, ফলিক এসিড, ক্যলসিয়াম, ও মাল্টিভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এজন্য প্রয়োজনীয় ফলমূল খাওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় দরকারী পুষ্টি পাওয়ার জন্য গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা অনুসরণ করা উচিত। প্রয়োজনে একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেয়া উচিত। এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ঔষধ খাওয়া উচিত। মনে রাখা জরুরি যে, সঠিক খাদ্যভাসের মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিতে হবে।

৩। একটিভ থাকা

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে নিয়মিত একটিভ থাকতে হবে। এজন্য প্রতিদিন নিয়ম করে টুকটাক কাজ করা যেতে পারে। এছাড়া সকালে ও সন্ধ্যায় হাটাহাটি করে একটিভ থাকা যায়। তবে এজন্য গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। 

৪। পর্যাপ্ত পানি খাওয়া

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি খাওয়া, নারমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য খুবই জরুরী। পানি আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। এছাড়া, পানি শরীরের ফ্লুইড চলাচলের জন্য সাহায্য করে। তাই নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ - ১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।

৫। পর্যাপ্ত ঘুম

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য করণীয় হিসেবে প্রেগ্ন্যাসির পুরো সময় নিয়মিত ঘুমানো প্রয়োজন। কারন এসময় ঘুমের ঘাটতি হলে শরীর খারাপ হতে পারে এবং মানসিক চাপ বাড়তে পারে। তাই প্রেগ্ন্যাসির সময় কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। যদিও প্রেগ্ন্যাসির সময় রাতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। এরকম হলে দিনের বেলা ঘুমিয়ে ঘাঠতি পূরন করা উচিত।

৬। যোগব্যয়াম করা

প্রেগ্ন্যাসির সময় অতিরিক্ত টেনশন ও মানসিক চাপ থাকে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত যোগব্যয়াম করা ভালো। এছাড়া যোগব্যয়াম শরীরকে শিথিল করে। যা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে কাজ করে।

৭। টেনশন ও মানসিক চাপ কমানো

গর্ভাবস্থার শুরু থেকে যেহেতু একজন গর্ভবতীর অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থাকে। তাই প্রথম থেকেই এগুলো কামানোর জন্য চেষ্টা করা উচিত। এগুলো কমানোর জন্য গান শোনা, বই পড়া ও ইবাদতে নিয়োজিত থাকা ভালো কাজ করে। 

অতিরিক্ত টেনশন ও মানসিক চাপ, মা ও সন্তানের ক্ষতি করতে পারে, যা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা তৈরি করে। তাই, একজন গর্ভবতীর নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে টেনশন ও মানসিক চাপ কমানোর উপায় গুলো ফলো করা উচিত।

৮। প্রেসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা

গর্ভাবস্থায় অনেকেরই ডায়াবেটিস ও হাই প্রেসার থাকে। অনেকের আগে থেকে ডায়াবেটিস না থাকলেও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে। এগুলো থাকলে নরমাল ডেলিভারি হওয়া কঠিন হয়ে যায়। 

তাই নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে ডাক্তারের পরামর্শে শুরু থেকেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো ফলো করা উচিত। একইভাবে কারো হাই প্রেসার থাকলে দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় ফলো করা উচিত।

৯। অভিভাবক ক্লাস

প্রথমবার প্রেগন্যান্সির সময় একজন নারীর, নরমাল ডেলিভারির হওয়ার বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা থাকে না। তাই নরমাল ডেলিভারিতে কত সময় লাগে, কি রকম ব্যথা হয় ও কি কি জটিলতা তৈরি হয় তা জানে না। এসম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নারীদের মাধ্যমে অভিভাবক ক্লাস করা উচিত। একজন গর্ভবতী নারীর, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার বিষয়ে আগে থেকে পুরো ধারণা থাকলে ভয় কম কাজ করে।

এছাড়া ডেলিভারি ব্যাথা শুরু হলে কী করা লাগবে, সে বিষয়ে সচেতন থাকে। তাই প্রেগ্ন্যাসির সময় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে অভিভাবক ক্লাস করা জরুরী।

১০। জন্মের পরিকল্পনা করা

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে সন্তান জন্মের পরিকল্পনা করা খুবই জরুরী একটি বিষয়। কারন, নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রেও কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে শিশুর মাথা উল্টো হয়ে থাকা, প্রসব ব্যাথা না উঠে পানি ভাঙা ও অন্যান্য জটিলতা থাকতে পারে।

তাই নরমাল ডেলিভারী কোথায় করানো উচিত? হাসপাতালে না বাসায়! বাসায় হলে প্রশিক্ষিত নার্স বা ধাত্রীর ব্যবস্থা রাখা। এছাড়া জটিলতার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ, যানবাহন ও লোকবলের ব্যাবস্থা রেখে জন্মের পরিকল্পনায় থাকা উচিত।


নরমাল ডেলিভারির বিভিন্ন পর্যায় কি ঘটে?

আমরা ইতিমধ্যে জানিয়েছি নরমাল ডেলিভারির সময়কে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এবং এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ৮ - ১৩ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

প্রথম পর্যায়

নরমাল ডেলিভারির প্রথম পর্যায়ে লেবার পেইন শুরু হয়। এসময় জরায়ু মুখ খোলা শুরু করে এবং গর্ভবতী নারীর ডেলিভারির ব্যাথা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিন ব্যাপি হতে পারে। ধীরে ধীরে জরায়ু মুখ খুলতে থাকে এবং ব্যাথা বাড়তে থাকে। এভাবে জরায়ু মুখ ১০ সেমিঃ পর্যন্ত খোলা হলে দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়

এই পর্যায় বাচ্চার মাথা জরায়ু মুখ দিয়ে বাইরে চলে আসে। এ পর্যায়ে মেয়েদের সর্বোচ্চ ব্যাথা শুরু হয়। তবে এসময় ব্যাথা কন্ট্রোল করে, সংকোচনের মাধ্যমে বাচ্চাকে বাইরে ঠেলে দিয়ে বের করতে হয়। এই প্রক্রিয়া কিছু সময় বা কয়েক ঘন্টা চলতে পারে।

তৃতীয় পর্যায়

এই পর্যায়ে বাচ্চা বের হওয়ার পর, গর্ভফুল বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ সময় ব্যাথা কিছুটা কমতে শুরু করে। এবং গর্ভফুল বের হওয়ার পর এই পর্যায় শেষ হয়।


নরমাল ডেলিভারি কত সপ্তাহে হয় ?

শেস মাসিকের শুরুর দিন থেকে, ৪০ সপ্তাহ পর ডেলিভারির তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত প্রেগন্যান্সির ৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪১ সপ্তাহের মধ্যে নরমাল ডেলিভারি হয়।

প্রসব ব্যথা শুরু না হলে করনীয়?

আগেই বলেছি, শেস মাসিকের শুরুর দিন থেকে, ৪০ সপ্তাহ পর ডেলিভারির তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত প্রেগন্যান্সির ৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪১ সপ্তাহের মধ্যে নরমাল ডেলিভারি হয়। তবেঁ, যদি ৪০ সপ্তাহ পর বা নির্ধারিত তারিখের ২ সপ্তাহের মধ্যে ডেলিভারি ব্যাথা শুরু না হয়, তাহলে দ্রুত গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে নিতে হবে। 

এক্ষেত্রে অনেকসময় চিকিৎসকের পরামর্শে, ব্যাথা উঠানোর ঔষধ দিয়ে নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয়। আবার কোন জটিলতা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে সিজারিয়ান অপারেশনের করানোর প্রয়োজন হতে পারে।

কখন নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না

কিছু ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা একদমই কম থাকে। যেমনঃ

  • যদি উচ্চ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকে
  • গর্ভের সন্তানের ওজন ও আকার বেশি হয়
  • যদি গর্ভফুল উল্টো দিকে থাকে
  • যদি বাচ্চার মাথা উল্টো হয়ে থাকে
  • যদি গর্ভে পানির পরিমাণ কম থাকে

এসব ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এসব ক্ষেত্রে সিজারিয়ান ডেলিভারি করার প্রয়োজন হতে পরে। তবে, নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব কিনা? তা অবশ্যই আপনার ডাক্তার বলবে। কারন, একেক জনের ক্ষেত্রে একেক ধরনের জটিলতা থাকতে পারে।


নরমাল ডেলিভারি কতটা কষ্টকর?

নরমাল ডেলিভারি কতটা কষ্টকর, তা নির্ভর করে প্রেগন্যান্ট মহিলার ও সন্তানের কন্ডিশনের উপর৷ একারনে, ব্যথা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। তবে সকলের ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি ব্যথা তীব্র হয়। এটা সহ্য করার জন্য সকলের আগে থেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত। 

কারো ক্ষেত্রে ব্যথা বেশি সময় ধরে হতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে কম সময় হতে পারে। অল্প সময়ে এবং কম ব্যথায় যাতে ডেলিভারি হয় সেজন্য বর্তমানে কিছু হাসপাতাল নারমাল ডেলিভারি করে থাকে। এজন্য, যেসব হাসপাতালে ব্যাথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি করে, সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন।

নরমাল ডেলিভারির ঝুকি


বাচ্চার পা আগে বের হওয়া


নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে কিছু ঝুকি থাকে। এরমধ্যে মা ও সন্তানের কন্ডিশন যদি ভালো না থাকে এবং এসময় যদি কোন চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত নার্স ছাড়া ডেলিভারির চেষ্টা করা হয়, তাহলে বিপদ হতে পারে। কারণ, অনেক সময় নরমাল ডেলিভারিতে সাইড কাটা লাগতে পারে। এছাড়া ডেলিভারির সময় গর্ভবতী নারীর পাঁচটি বিপদ চিহ্ন দেখা দিতে পারে।

তাই আপনারা নরমাল ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নিলে, অবশ্যই একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে, কোন ঝুঁকি আছে কিনা? এবং ঝুকি এড়াতে নরমাল ডেলিভারি অবশ্যই ডাক্তার, নার্স অথবা প্রশিক্ষিত ধাই এর মাধ্যমে করানো উচিত।

আমাদের শেষ কথা

আজকে আমরা আপনাদের জানালাম, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় ও নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষন। এছাড়াও আলোচনা করেছি, নরমাল ডেলিভারির বিভিন্ন পর্যায়, নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা, নরমাল ডেলিভারির ঝুঁকি, প্রসব ব্যথা শুরু না হলে করনীয় ও নরমাল ডেলিভারির ব্যথা কেমন হয় এবং একটি নরমাল ডেলিভারি ভিডিও কোথায় পাবেন। 

আশাকরি আর্টিকেলটি পড়ে, আপনারা নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এবং নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে যা যা করণীয় তা করতে পারবেন। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য প্রেগ্ন্যাসির শুরু থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এ বিষয়ে গর্ভবতী নারীকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য গর্ভবতী মায়ের মানসিক শক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ন। এ বিষয়ে আরও কিছু জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url