দাঁতের মাড়ি ব্যথা দ্রুত কমানোর ১১ টি সহজ ঘরোয়া উপায় ও ভেষজ ঔষধ।

আজকে আমরা আপনাদের জানাবো, দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায়। যার মধ্যে থাকবে দাঁতের মাড়ি ব্যথা দ্রুত কমানোর কিছু ঘরোয়া ভেষজ ঔষধ। একই সাথে এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায়, দাঁতের মাড়ি শক্ত করার উপায়ও দাঁতের মাড়ি ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে ভালো কাজ করে।


দাঁতের মাড়ি ব্যথায় আক্রান্ত একজন নারী


দাঁতের মাড়িতে ব্যথা কেন হয়? বা দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় কেন? নিশ্চয়ই এর পিছনে কোন কারণ থাকে। দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন, দাঁতের মাড়ি ক্ষয় ও আক্কেল দাঁত ওঠা সহ নানা কারণে দাঁতের মাড়িতে ব্যথা, দাঁতের মাড়িতে ঘা, দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পরা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই, দ্রুত দাঁতের মাড়ি ব্যথার চিকিৎসা করা উচিত। নাহলে, দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সার সহ দাঁতের মাড়ির নানা জটিল রোগ হতে পারে।

অনেক মানুষ রয়েছেন যারা দাঁতের ও মাড়ির নানা সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে দাঁতে ব্যথা বা দাঁতের মাড়ির ব্যথা খুবই অসহ্য একটি যন্ত্রণা। অথচ সামান্য কিছু ঘরোয়া উপায়ে আপনি বাড়িতেই দাঁতের মাড়ি ব্যথা বা দাঁতের মাড়ি ফোলা দ্রুত কমাতে পারেন এবং যা পরবর্তীতে দাঁতের মাড়ি শক্ত করার উপায় হিসেবে কাজ করবে।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা দ্রুত কমানোর ঘরোয়া উপায় ও ভেষজ ঔষধ।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনারা নিচের ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে, খুব দ্রুতই মাড়ির ইনফেকশন দূর করে দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমাবে।

১। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় - লবণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে, এই পদ্ধতির জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ১ টেবিল চামচ লবণ এবং এক গ্লাস গরম পানি (ফুটন্ত নয়)।এরপর আপনি সেই এক গ্লাস গরম পানিতে লবণ যোগ করুন এবং এটি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন। ফোলা কমে না যাওয়া পর্যন্ত দিনে অন্তত দুবার উষ্ণ লবণ পানি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন।

দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর জন্য লবণ পানি সর্বাধিক ব্যবহৃত প্রতিকার গুলির মধ্যে একটি। এটি মুখের পিএইচ নিরপেক্ষ করে এবং স্ফীত মাড়িকে শান্ত করে । এটি দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে আপনার একান্ত করণীয় একটি কাজ।

২। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায়- গরম এবং ঠাণ্ডা চাপ।

এই পদ্ধতি টি দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে অন্যতম। ব্যথা কমাতে সাহায্য করার জন্য একটি গরম বা ঠান্ডা চাপ ব্যবহার করুন।

একটি গরম চাপের জন্য, একটি সহনীয় তাপমাত্রায় গরম পানি নিন (ফুটন্ত নয়)। একটি পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ভেজানর পর কাপড় টিকে নিংরে নিন। এরপর আপনার মাড়িতে ব্যথা হচ্ছে এমন জায়গার কাছাকাছি উষ্ণ, স্যাঁতসেঁতে কাপড়টি আলতো করে চাপুন (সরাসরি আপনার মাড়িতে নয়)।

একটি ঠান্ডা চাপের জন্য, দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে একটি পরিষ্কার কাপড়ে একটি বরফে্র খণ্ড মুড়িয়ে নিন এবং এরপর আপনার মাড়িতে ব্যথা হচ্ছে এমন জায়গার কাছাকাছি কাপড়টি আলতো করে চাপুন (সরাসরি আপনার মাড়িতে নয়)।

৩। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর ভেষজ ঔষধ - লবঙ্গের তেল।

দাঁতের মাড়িতে ঘা এর কিছু ভেষজ ঔষধ রয়েছে, যেগুলো খুব দ্রুত দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে কার্যকর।

এই ঘরোয়া প্রতিকার গুলো আপনি হাতের কাছেই পাবেন। দাঁতের মাড়িতে ঘা, ফোলা এবং ব্যথাযুক্ত হলে লবঙ্গের তেল লাগিয়ে খুব আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি কালো মরিচের সাথে লবঙ্গ তেল মিশিয়ে ও ব্যবহার করতে পারেন। স্বস্তি পেতে বিশেষজ্ঞরাও লবঙ্গ চিবানোর পরামর্শ দেন। এগুলি দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প দাঁতের ও মড়ির ব্যথা উপশমকারী হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

৪। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় - টি ব্যাগের ব্যবহার।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসবে, চা তৈরির জন্য একটি তাজা টি ব্যাগ নিন। এবং ফুটন্ত পানিতে ৫ মিনিট পর্যন্ত ধরে রাখুন। যখন টি ব্যাগ স্পর্শ করার মতো যথেষ্ট ঠান্ডা হবে, তখন কমপক্ষে ৫ মিনিটের জন্য এটি সরাসরি ব্যথাযুক্ত মাড়িতে প্রয়োগ করুন।

৫। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর ঔষধ - চা গাছের তেল।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর ঔষধ হিসেবে, চা গাছের তেল তার প্রাকৃতিক প্রদাহরোধী এবং অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য পরিচিত। আপনার দাঁতের মাড়ি ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া উপায় এবং অন্যান্য মুখের অসুস্থতায় সাহায্য করার জন্য এটি নিখুঁত।

এটি ব্যবহার করার জন্য, চা গাছের তেলের কয়েক ফোঁটা এক গ্লাস পানিতে রাখুন এবং এটি নিয়মিত মাউথওয়াশ হিসাবে ব্যবহার করুন।কারন, এটি দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন দূর করে। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পরার প্রতিকার হিসেবে আপনি চা গাছের তেলযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।

৬। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় - লবঙ্গ পেস্ট।

লবঙ্গ

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে, আপনি চাইলে লবঙ্গ এর গুরা এবং পানি দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে পারেন। যা আপনার দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমাতে খুব দ্রুত সাহায্য করতে পারে। মানুষ শতাব্দী ধরে তাদের দাঁতের ও মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে এই ভেষজ ঔষধ ব্যবহার করে আসছে। লবঙ্গ নির্ভরযোগ্য একটি ভেষজ ঔষধ।

একটি লবঙ্গ পেস্ট তৈরি করতে হলে লবঙ্গ গুঁড়ো, অল্প পরিমাণে উষ্ণ পানির সাথে মিশ্রিত করুন। পেস্টের মতো না হওয়া পর্যন্ত ভালো করে মেশান। এর পর তৈরি করা পেস্ট টি দাঁতের মাড়িতে সরাসরি লাগাতে পারেন। মাড়ির ব্যথার জায়গায় কিছু পেস্ট সরাসরি লাগিয়ে ৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। হালকা ম্যাসেজ করে নিশ্চিত করুন যে, আপনি এটি আপনার মাড়িতে ঘষছেন। পরে, আপনি উষ্ণ গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন।

৭। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর ভেষজ ঔষধ - হলুদ পেস্ট।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে, হলুদ আরেকটি প্রাকৃতিক উপাদান যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। হলুদ আপনার দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন, দাঁতের মাড়িতে ঘা ,দাঁতের মাড়ি ফোলা, দাঁতের মাড়ি ব্যথা এবং দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পরা কমাতে সাহায্য করে।

হলুদ

ইএকটি হলুদ পেস্ট তৈরি করার জন্য ১/৪ চা চামচ হলুদ এর গুঁড়া অল্প পরিমান উষ্ণ পানির সাথে মিশ্রিত করুন । পেস্টের মতো না হওয়া পর্যন্ত ভালো করে মেশান। এরপর মাড়ির ব্যথার জায়গায় কিছু পেস্ট সরাসরি লাগান। পেস্টটি কয়েক মিনিটের জন্য রেখে দিন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। ব্যথা কমাতে একজন ব্যক্তি যতবার প্রয়োজন ততবার এই পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।

৮। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর ভেষজ ঔষধ - আদা পেস্ট।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আদা পেস্ট আরেকটি কার্যকর ভেষজ ঔষধ। এই ঔষধ টি বানানোর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে আদার একটি ছোট টুকরা এবং ১/২ চা চামচ লবণ। প্রথমে আদা গুঁড়ো করে নিন এবং তাতে লবণ যোগ করুন যাতে মোটা পেস্ট পাওয়া যায়।

এই পেস্টটি আপনার মাড়ির ফোলা অংশে ঘষুন এবং ১০-১২ মিনিটের জন্য রেখে দিন।এরপ্র স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনি দিনে ২-৩ বার করতে পারেন। আদার প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আপনার দাঁতের মাড়ি ফোলা এবং দাঁতের মাড়ি ব্যথা দ্রুত কমাবে

৯। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় - বেকিং সোডা।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ১ চা চামচ বেকিং সোডা এবং এক চিমটি হলুদ। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, হলুদ গুঁড়োর সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে মিশ্রণটি দিয়ে আপনার মাড়িতে ম্যাসাজ করুন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় হিসেবে দাঁত ব্রাশ করার জন্য বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন। আপনি চাইলে এটি প্রতি সকালে এবং প্রতি সন্ধ্যায় দুইবার করতে পারেন। দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে বেকিং সোডা ব্যবহার করে অনেক কার্যকর। বেকিং সোডা এন্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হওয়ায়, ফুলে যাওয়া সংক্রমণের চিকিৎসা করে। এটি আপনার দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমায় এবং কোমল ত্বককে প্রশান্ত করে।

১০। দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় - লেবুর রস।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে লেবুর রস আরেকটি কার্যকর ঘরোয়া উপায়। এই পদ্ধতির জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং এক গ্লাস গরম পানি।আপনাকে যা করতে হবে তা হলো। পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে গার্গল করুন।

স্বস্তি না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন দুবার গার্গল করুন। লেবুতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ রয়েছে যা সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলিকে মেরে ফেলে দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন কমায় এবং দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায় হিসেবে কাজ করবে।

১১। দাঁতের ও মাড়ির সমস্যা প্রতিরোধে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা চিকিৎসায় সর্বোত্তম উপায় হলো এটি প্রথমে প্রতিরোধ করা। আপনার দাঁতের মাড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো আপনার পুষ্টি উন্নত করা। আপনার খাবারে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ফলিক অ্যাসিড অন্তর্ভুক্ত করা শুরু করুন।

ভিটামিন সি বিভিন্ন ধরনের খাবারে পাওয়া যায় যেমন ব্রকলি, বেল, মরিচ, কমলা, আনারস, লেবু এবং স্ট্রবেরি।আপনার খাবারে এই ভিটামিন না থাকার কারনে মাড়ির বিভিন্ন রোগে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন।

সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম, মুখের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক দারকারি। তাই ক্যালসিয়াম পাওযা যায় এমন খাবার খান।

এছাড়া মটরশুটি, মসুর ডাল, ব্রকলি, সবুজ শাক, মটর এবং অ্যাভোকাডো খেয়ে আপনি ফলিক অ্যাসিড পেতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা

আজকে আমরা আপনাদের জানালাম, দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় ও দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর কিছু ভেষজ ঔষধ। এছাড়া, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার প্রতিকার, দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায় এবং দাঁতের মাড়িতে ঘা এর কিছু ভেষজ ঔষধ, ইত্যাদি।

দাঁতের মাড়ি ব্যথার পেশাদার চিকিৎসা

আপনারা নিশিন্তে দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর এই উপায় গুলো ব্যবহার করতে পারেন ।কারণ, এগুলোর কোন সাইড ইফেক্ট নেই। তবে, সবগুলো পদ্ধতি একবারে ব্যাবহার করবেন না। কিন্তু, যদি আপনার মাড়ির ইনফেকশন দীর্ঘমেয়াদি বা সিরিয়াস হয়, তাহলে আপনার অবশ্যই একজন পেশাদার ডাক্তার দেখানো উচিত।

পোষ্ট টি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url