মাথার উকুন চিরতরে দূর করার ৯ টি ঘরোয়া উপায়।
উকুন দূর করার উপায় বা মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায় নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো। প্রায় প্রতেক নারীর জিবনে একটি বিরক্তিকর সমস্যা মাথার চুলে উকুন। এটি অনেক পুরুষের চুলেও বাসা বাঁধে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের চুলে এদের বসবাস অনেক বেশি।
বাসার একজনের মাথায় উকুন বাসা বাঁধলে সেখান থেকে সবার মাথায় ছড়িয়ে যায়। বাসার শিশুরাও এর আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় না। মাথায় উকুন হলে অনেক চুলকানি হয়, এছাড়া এটি খুবই অসস্থিকর ও বিরক্তিকর। অনেক সময় উকুনের কারনে মাথার ত্বকে এলার্জি বা ক্ষতিকর চর্মরোগ হতে পারে। তাই, চলুন দেখে নেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায়।
আপনি যদি উকুন দূর করার জন্য বাজারের বিভিন্ন উকুন নাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করার কথা ভেবে থাকেন। তাহলে জেনে রাখুন, উকুন নাশক শ্যাম্পু ব্যবহার এর অনেক সাইড ইফেক্ট আছে। যা আপনার চুলের বা মাথার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া, অনেকে উকুন মারার ওষুধের নাম কি তা জানতে চান। উকুন মারার ওষুধে সাইড ইফেক্ট রয়েছে। হয়তো, এজন্য আপনার চুলের বা মাথার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
তাই আপনি অথবা আপনার পরিবারের কেউ যদি উকুনের উপদ্রবে ভুগে থাকেন, তাহলে আজকেই এই আর্টিকেলটি থেকে জেনে নিন, ঘরোয়া ও ভেষজ উপায়ে, সহজে মাথার উকুন দূর করার উপায়।
মাথায় উকুন কেন হয়? কিভাবে হয়?
উকুন আসলে এক ধরনের পরজীবী পোকা। যা মানুষের মাথার ত্বকে, ঘাড়ে ও চুলের সঙ্গে লেগে থাকে। উকুন মানুষের মাথার চামড়া থেকে রক্ত খেয়ে বেচে থাকে। একটি উকুন মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যে ডিম পারে। এই কারনে একজনের মাথায় উকুন হলে তা কিছুদিনের মধ্যে ব্যপক বংশবিস্তার করে ছড়িয়ে পরে।
উকুন দেখতে তিলের মতো হলেও এর ডিম গুলো সাদা, বাদামী এবং ধূসর রঙের হয়ে থাকে। মুলত উকুন একজনের কাছ থেকে আরেক জনের মাথায় যায় এবং চুলে বাসা বাঁধে। একটি উকুন একজনের ব্যবহার করা চিরুনি, চুলের ক্লিপ, টুপির মধ্যে অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে এবং সেখান থেকে আরেকজনের চুলে বাসা বাঁধতে পারে।
এছাড়া ব্যবহৃত বিছানা, বালিশের কাভার, পোশাক ইত্যাদির মাধ্যমে উকুন ছড়ায়। তাই আপনি উকুন দূর করার উপায় গুলো প্রয়োগ করার সময়, চুল ছাড়াও আপনার চূলের সাথে যেসব জিনিসের স্পর্শ হয় সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। যেমন আপনার বালিশ, বিছানার চাদর, চুরুনি এগুলো গরম পানি দিয়ে দুয়ে নিবেন।
বাসার সবার মাথার চুলে উকুন থাকলে, সবাই একত্রে মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায় গুলো ব্যবহার করবেন। পাশাপাশি সবার চুলের সাথে সম্পর্কিত জিনিসগুলো পরিষ্কার করবেন। বলতে পারেন উকুনের বিরুদ্ধের গেরিলা অভিযান। এর কারণ হলো, আপনি যদি উকুনের বংশ সহ উচ্ছেদ না করতে পারেন, তাহলে কিছুদিন পর আবার উকুন বংশ বৃদ্ধি করে ফিরে আসবে।
উকুন দূর করার উপায়
অনেকেই চুলের যত্ন নিয়ে, উকুন নাশক শ্যাম্পু, নানা ধরনের সাবান ও উকুন দূর করার উপায় হিসেবে ঔষধ ব্যবহার করেও অনেক সময় উকুনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পান নি, উল্টো চুলের ক্ষতি করেছেন। তারা, এই ঘরোয়া উপায় গুলো ব্যবহার করে দেখুন। চলুন তাহলে দেখি নেই, ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায় গুলো।
#১। উকুন দূর করার উপায় হিসেবে নিমপাতার ব্যবহার
নিমপাতা প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা, ইউনানি ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। অনেকগুণের এই নিম পাতায় আছে- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিডায়াবেটিক, অ্যান্টিভাইরাস, এনালেজিক, অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিপাইরেটিক, অ্যান্টিমাইক্রবাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং রক্ত বিশুদ্ধকরণ উপাদান।
মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায় হিসেবে এই নিমপাতার রস ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে কিছু নিমপাতা ভেটে রস বের করে নিন। তারপর নিমপাতার রস আপনার মাথার চুলে ভালো করে লাগিয়ে রেখে দিন। কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নিন। এভাবে পরপর কয়েকদিন করলে দেখবেন আপনার চুলের উকুন দূর হয়েছে।
#২। মাথার উকুন দূর করার উপায় হিসেবে রসুনের ব্যবহার
উকুন দূর করার উপায় হিসেবে আরেকটি ঘরোয়া পদ্ধতি হলো রসুনের ব্যবহার। এরজন্য কয়েক কোয়া রসুন নি্যে ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে বেটে নিন। এর সঙ্গে ২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে, মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন। চুলের কোনো অংশ যেন বাদ না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এভাবে ৩০ মিনিট পেস্টটি মাথার চুলে লাগিয়ে রাখুন। তার পর হালকা গরম পানিতে চুল ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে তিন দিন এই পদ্ধতিটি কাজে লাগালে উকুনের সমস্যা খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন
#৩। ঘরোয়া পদ্ধতিতে উকুন দূর করার উপায় হিসেবে পেঁয়াজের রস
মাথার উকুন দূর করার উপায় হিসেবে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। পেঁয়াজের রস মাথায় এবং চুলে লাগিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। অবশ্যই চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগাবেন। এভাবে কিছুক্ষণ চুল ঢেকে রেখে তার পর হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। পরে চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন এবং উকুন দূর করুন। সপ্তাহে দুবার এটি ব্যবহার করে পুরোপুরি উকুন দূর করতে পারেন।
#৪। মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায় হিসেবে লেবুর রস
#৫। মাথার উকুন দূর করার উপায় হিসেবে বেকিং সোডা
উকুন দূর করার উপায় হিসেবে বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন। এই পদ্ধতির জন্য দরকার বেকিং সোডা ও কন্ডিশনার। এক ভাগ বেকিং সোডার সাথে তিন ভাগ কন্ডিশনার মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি ১৫ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রাখুন। তার পরে চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল টেনে নিলেই উকুন এবং তার ডিম চলে যাবে মাথা থেকে। এভাবে পরপর কয়েকদিন করলে চুলের উকুন দূর হবে।
#৬। মাথার উকুন দূর করার উপায় হিসেবে ভিনেগার
উকুন দূর করার উপায় হিসেবে ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। সম পরিমাণ পানি আর ভিনিগার মিশিয়ে মাথায় লাগান। এবার একটি তোয়ালে দিয়ে মাথার চুল আধ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। এর পরে চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে মাথায় চালিয়ে নিলেই বেরিয়ে আসবে ডিম-সহ উকুন।
#৭। মাথার চুলে উকুন দূর করার উপায় হিসেবে পেট্রোলিয়াম জেলি
উকুন দূর করার উপায় হিসেবে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার চুলে একটু চিটচিটে ভাব আনতে পারে। পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহারের পর বেশ কয়েকবার শ্যাম্পু করারও প্রয়োজন পড়বে। তবে উকুন দূর করতে এটি খুবই কার্যকরী।
#৮। উকুন দূর করার উপায় হিসেবে নারকেল তেল ও লবঙ্গের তেল
উকুন দূর করার উপায় হিসেবে নারকেল তেল ও লবঙ্গের তেল একসাথে ব্যবহার করতে পারেন। একথা মোটামুটি সবারই জানা যে, নারকেল তেল ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। ২০১০ সালে ব্রাজিলে করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, নারকেল তেল প্রাকৃতিক ভাবে উকুন দূর করতেও খুবই কার্যকরী। এর সঙ্গে খানিকটা লবঙ্গের তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে পুরোপুরি খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করতে হবে। গবেষকরা দাবি করেন, এটি ব্যবহারের ৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮০ শতাংশ উকুন মারা যায়।
#৯। উকুন দূর করার উপায় হিসেবে চিকন দাঁতের চিরুনির ব্যবহার
উপরের বিভিন্ন প্যাক গুলো ব্যবহার করার পর, উকুন দূর করার উপায় হিসেবে চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। উকুন দূর করার জন্য প্রাচীন মিশরীয়রা কাঠের তৈরি খুবই চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করতো। চুলে শ্যাম্পু করার পর এই চিরুনি দিয়ে ভালোভাবে চুল আছড়ে নিতে পারেন। তাই চুলের জন্য সব সময় চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন যাতে উকুন অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
উকুন দূর করার উপায় হিসেবে আরও কিছু সতর্কতা ও পরামর্শ
- একটি ডোজ শেষ হওয়ার পরও যদি উকুন দূর না হয় তবে অন্যটা ব্যবহার করুন।
- একই প্যাক বা ওষুধ একাধিকবার ব্যবহার করবেন না।
- শিশুদের ক্ষেত্রে উকুন দূর করতে কোনো কেমিক্যাল পণ্য ব্যবহার করা উচিত হবে না।
- উকুন দূর করার উপায় গুলো ব্যবহারের সময় কন্ডিশনার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
আমাদের শেষ কথা
আজকে আমারা আপানাদের জানালাম, উকুন দূর করার উপায় বা মাথার উকুন দূর করার উপায় সম্পর্কে। আগেই উল্লেখ করেছি উকুন এক ধরনের পরজীবী পোকা, যা বাড়িতে একবার প্রবেশ করলে সবার মাথায় ছড়িয়ে যাওয়া একদম অবধারিত। উকুনের সমস্যা একবার শুরু হলে সহজে পিছু ছাড়তে চায় না।
তাই, মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায় গুলো ব্যবহার করার সময় ঘরের সবার (যারা এই সমস্যায় ভুগছেন) একসাথে করা ভালো। একই সাথে সবার চুলের সাথে সম্পর্কিত সকল জিনিস পরিষ্কার করা উচিত। তাহলেই আপনি বা আপনারা উকুনের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবেন।
এছাড়া আপানারা যারা উকুন নাশক শ্যাম্পু বা উকুন দূর করার উপায় হিসেবে ঔষধ ব্যবহার করার কথা ভাবছেন। তারা এগুলো ব্যবহার করার আগে, আমাদের দেওয়া ঘরোয়া পদ্ধতিতে উকুন দূর করার উপায় গুলো ফলো করে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো ফল পাবেন।