ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়?

ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, তা আজকে আপনাদের জানাবো। এছাড়া, ডায়ালাইসিস কী, ডায়ালাইসিস কেন প্রয়োজন ও ডায়ালাইসিসের খরচ কত তাও জানাবো। আপনারা হয়তো জানেন, কিডনি সমস্যার বিভিন্ন টেস্টের মধ্যে ক্রিয়েটিনিন টেস্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি টেস্ট। কারণ, ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা দেখা হয়।

একজন নারী প্যাথলজিস্ট ব্লাড স্যাম্পল দিয়ে ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করছে

কিডনি ফেইলিওর এর ক্ষেত্রে বা কিডনির অংশিক ফেইলওর এর ক্ষেত্রে, রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বেড়ে যায়। এসময় ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে কিডনির কাজ করা হয় এবং রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমানো হয়। 

যদি, মানুষের দুটি কিডনি অকার্যকর হয় এবং ডায়ালাইসিস না করা হয়, তাহলে মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এজন্য, কিডনি রোগীর ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি হলে গুরুত্ব দেয়া উচিত এবং ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় তা জানা উচিত।


আজকে যা জানাবো

  • ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত স্বাভাবিক?
  • ডায়ালাইসিস কি? কেন প্রয়োজন?
  • ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়?
  • ডায়ালাইসিসের খরচ কত?

ক্রিয়েটিনিনের লেভেল কত স্বাভাবিক?

ব্লাড স্যাম্পল
কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় তা জানার আগে আপনাদের জানা উচিত, কিডনি কত পয়েন্ট ভালো বা ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত স্বাভাবিক। যদিও এর আগে, কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনির বিভিন্ন টেস্ট এর নাম ও ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক মাত্রা কত, তা নিয়ে আমরা আর্টিকেল প্রকাশ করেছি। তারপরও এখানে আবারও আপনাদের ক্রিয়েটিনিনের লেভেল কত স্বাভাবিক তা বলছি।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের রক্তে ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক লেভেল ০.৬ থেকে ১.২ gm/dl এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে ০.৫ থেকে ১.১ gm/dl।

কিশোরদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক লেভেল ০.৫ থেকে ১.০ gm/dl।

শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক লেভেল ০.৩ থেকে ০.৭ gm/dl।

এছাড়া যাদের একটি কিডনি নেই তাদের ক্ষেত্রে ১.৮ gm/dl পর্যন্ত ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা স্বাভাবিক।

প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর লেভেল ৫.০ gm/dl এর বেশি হলে কিডনি ফেইলওর হয়েছে বলে ধরা হয়।

কিডনির জন্য সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেষ্ট এর রিপোর্ট স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি হলে কিডনি ডিসিজ হয়েছে বলে ধরা হয়। তবে বিভিন্ন কারণে ক্রিয়েটিনিন এর লেভেল কম বেশি হতে পারে। এজন্য, আপনারা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুইটি ডায়াগনস্টিক থেকে ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করাবেন। এছাড়া ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় তা আমরা নিচে আপনাদের বলছি।

আরও পড়ুন

ডায়ালাইসিস কি? কেন প্রয়োজন?

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, তা জানার আগে আপনাদের ডায়ালাইসিস বিষয়ে একটু ধারণা থাকা উচিত। আমরা এর আগে আপনাদের জানিয়েছে, মানুষের দুটি কিডনির মধ্যে দিয়ে রক্ত ছাকন হয়ে বিশুদ্ধ হয়। 

এভাবে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার লিটার রক্ত প্রতিদিন বিশুদ্ধ হয় (কিডনির মধ্যে দিয়ে রক্ত বারবার যেতে থাকে বলে পরিমান এত বেশি)। কিডনি এই ছাঁকন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের দুষিত পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি প্রসাবের সাথে বের করে দেয়।

কিডনি যখন অকার্যকর হয়ে যায়, তখন কিডনির পক্ষে রক্ত পরিশোধন করা এবং ক্ষতিকর পদার্থ বের করা সম্ভব হয় না। তখন শরীরে কিডনি সমস্যার বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। এসময় রক্ত পরিশোধন করা ও ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বের করতে ডায়ালাইসিস করতে হয়।

অর্থাৎ কিডনির রক্ত পরিশোধনের কাজটি, মেশিনের মাধ্যমে করাকে ডায়ালাইসিস করা বলে। ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম যন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে রক্ত পরিশোধন করা হয়।

কিডনির কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে সপ্তাহে কমপক্ষে একজন কিডনি রোগীর সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ বার ডায়ালাইসিস করতে হয়। তবে সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত।

এছাড়া, ডায়ালাইসিস কখনো কিডনির বিকল্প নয়। কারণ, কিডনি রক্ত পরিশোধন ছাড়া আরও অনেক কাজ করে। তাই, ডায়ালাইসিস করলেও কিডনির কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। এছাড়া, কিডনি রোগের ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা গুলো করতে পারেন। এখন আমরা আপনাদের জানাবো, কিডনি কত পয়েন্ট হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়।

ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়?

আমরা ইতিমধ্যে জানিয়েছি, সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর মাধ্যমে কিডনির রোগ নির্ণয় করা হয়। তবে শুধুমাত্র ক্রিয়েটিনিন টেস্টই কিডনির কার্যকারিতা দেখার একমাত্র টেস্ট নয়। কিডনির কার্যকারিতা সঠিক ভাবে দেখার জন্য কিডনির অন্যান্য টেস্ট রয়েছে।

এছাড়া ক্রিয়েটিনিনের লেভেল কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সেটা নির্ভর করবে, রোগীর শরীরে অন্যান্য ফাংশনের কার্যকারিতার উপর। তাই কিডনি রোগীর ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

কারণ, এটা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। তাই, কিডনি রোগীর ক্রিয়েটিনিন টেস্ট সহ অন্যান্য টেস্ট করে একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শে ডায়ালাইসিস করা উচিত। সাধারণত চিকিৎসকরা নিম্নবর্নিত কন্ডিশন গুলো থাকলে ডায়ালাইসিস করার পরামর্শ দেন।

  • ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি হলে।
  • কিডনি ড্যামেজ হয়ে শরীর ফুলে গেলে।
  • প্রসাব একদমই কমে গেলে।
  • রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে।
  • কিডনি ফেইলিওর হলে।

একজন কিডনি রোগীর এই লক্ষনগুলো মিলে গেলে ডায়ালাইসিস করতে হতে পরে। তবে, আমরা আবারও বলছি, ডায়ালাইসিস অবশ্যই কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শে করা উচিত।

আরও পড়ুন

ডায়ালাইসিসের খরচ কত?

ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, তা জানার পর নিশ্চয়ই আপনাদের জানা উচিত, কিডনি ডায়ালাইসিস এর খরচ কত? 

কিডনি ডায়ালাইসিসের খরচ হাসপাতাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণত সরকারি হাসপাতালে প্রতি ডায়ালাইসিস এর খরচ ৫০০-৭০০ টাকা। এবং বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি ডায়ালাইসিসের খরচ ৪০০০-৫০০০ টাকা।

তবে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে, দারিদ্র্য রোগীদের জন্য কম খরচে ডায়ালাইসিস করার সুযোগ পাওয়া যায়। যেমন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল দারিদ্র্য রোগীদের নিবন্ধন এর মাধ্যমে কম খরচে ডায়ালাইসিস করেন।

আমাদের শেষ কথা

ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় তা আজকে আমরা আপনাদের জানালাম। এছাড়াও আমরা জানিয়েছি, ক্রিয়েটিনিনের লেভেল কত স্বাভাবিক, ডায়ালাইসিস কী এবং ডায়ালাইসিসের খরচ কত।

আশা করি, ক্রিয়েটিনিনের এর লেভেল কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, আপনারা তা বুঝতে পেরেছেন। মূলকথা হলো ক্রিয়েটিনিন লেভেল এর পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অবস্থা দেখে চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়ালাইসিস করতে হবে। কিডনি রোগ বিষয়ে আপনারা আরও কিছু জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url