কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়। কিডনি টেস্ট এর নাম।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় নিয়ে আজকে আমরা আপনাদের জানাবো। এছাড়া, কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনি টেস্ট নাম লিস্ট জানাবো। কিডনি মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কারণ, আমাদের শরীরের দুটি কিডনি প্রতিদিন প্রায় ১০০০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে এবং শরীরে দূষিত বর্জ্য প্রসাবের সাথে বাইরে বের করে দেয়।
কিন্তু, নানা করনে কিডনি সমস্যা দেখা দিলে, কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং আস্তে আস্তে কিডনি ড্যামেজ হয়ে মানুষ মারা যায়। কিডনি মানুষের শরীরের কতটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তা কেবল কিডিনি রোগীরাই বুঝতে পারেন।
গবেষনায় দেখা যায়, বেশিরভাগ কিডনি রোগী, যারা মারা গেছেন বা একটি কিডনি নষ্ট হওয়ার পরও কিডনি প্রতিস্থাপন করে বেচে আছেন, তারা প্রথম দিকে কিডনি সমস্যার তেমন কোন গুরুত্ব দেন নাই। এমনকি যারা কিডনি সমস্যায় ভুগে ব্যায়বহুল ডায়ালেসিস করেও অনেক কষ্টে বেচে আছেন তারাও প্রথম দিকে সচেতন ছিলেন না।
যদি আপনারা এ বিষয়ে একটু সচেতন থাকেন এবং কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় গুলো খেয়াল করেন, তাহলে কিডনি ভালো আছে কিনা বুঝতে সমস্যা হবে না। চলুন তাহলে কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় গুলো জানি।
আজকে যা জানবো
- কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
- কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনি রোগের লক্ষণ
- কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনি টেস্ট এর নাম
- কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় হিসেবে সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর স্বাভাবিক মাত্রা কত?
- কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনির অন্যান্য টেস্ট এর নাম।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে আপনাদের দুটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। একটি হলো কিডনি রোগের লক্ষণ গুলোর দিকে খেয়াল রাখা এবং দ্বিতীয়টি হলো কিডনির সমস্যা বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু টেস্ট করা। আমরা আপনাদের কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো এবং কিডনি রোগের প্রয়োজনীয় টেস্ট গুলোর নাম আলাদা ভাবে বলবো। এছাড়াও, কিডনি রোগের সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর স্বাভাবিক মাত্রা কত তা জানাবো।
কিন্তু, কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে, আপনারা প্রথমে কিডনির রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলে সাথে সাথে কিডনি রোগের টেস্ট গুলো করে নিশ্চিত হবেন।
যদিও, অনেকের কিডিনি রোগের লক্ষণ গুলো প্রথম দিকে সামান্যই প্রকাশ পায় বা একদমই প্রকাশ পায় না। অনেকের ক্ষেত্রে, যত দিনে কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, তত দিনে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হয়ে যায়।
আবার, অনেকের ক্ষেত্রে কিডনি রোগের যে লক্ষণ গুলো দেখা দেয়, সেগুলো দেখা দিলেই যে কিডনির সমস্যা হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ, এই লক্ষণ গুলো অন্য রোগের কারনেও হতে পারে।
তাহলে, কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় কি? এটাই আপনাদের গুরুত্ব দিয়ে বুঝতে হবে। যদি, আপনাদের কিডনির রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে তো আপনারা সাথে সাথে কিডনির প্রয়োজনীয় টেস্ট করে নিশ্চিত হবেন।
কিন্তু, কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাক বা না পাক, একজন পূর্নবয়স্ক মানুষের প্রতিবছর এক থেকে দুই বার কিডনি পরিক্ষা করা উচিত। এছাড়া, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা ও বংশগত কিডনি রোগ আছে এবং ষাটোর্ধ বয়সীদের প্রতি ছয়মাসে এক থেকে দুইবার কিডনি টেষ্ট করা উচিত। তাহলেই কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝা যাবে।
আরও পড়ুনকিডনি সমস্যা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনি রোগের লক্ষণ
যদিও এর আগে আমাদের ব্লগে আমরা কিডনি রোগের কারণ ও কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ নিয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করেছি। তারপরও কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে আপনাদের কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো সংক্ষেপে বলছি।
১। শরীরে ফোলা ভাব
কিডনি রোগের লক্ষণ হিসেবে শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফুলে যায়। বিশেষ করে, পা ফুলে যাওয়া বা পায়ে পানি জমতে পারে। এছাড়া হাত বা দেহের বিভিন্ন অংশ ফুলে যেতে পারে।
২। প্রসাবে সমস্যা
কিডনি সমস্যা হলে প্রসাবে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে প্রসবে জ্বালাপোড়া, প্রসাব কম বা বেশি হওয়া, ঘন ঘন প্রসাব হওয়া এবং প্রসাবে রক্ত যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রসাবে রক্ত যাওয়া খুবই ঝুকিপূর্ন। এরকম হলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া উচিত।
৩। বমি ভাব
কিডনি সমস্যা দেখা দিলে বমি বমি ভাব হতে পারে। এছাড়া মাথা ঘোরানো এবং অতিরিক্ত বমি হতে পারে।
৪। ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমা
কিডনি রোগ দেখা দিলে ক্ষুদা কম লাগে। কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। এছাড়া ওজন কমে যাওয়া শুরু করে।
৫। ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্ট হওয়া
কিডনি ডিজিজ দেখা দিলে সব সময় ক্লান্ত অনুভব হয়। এছাড়া কিডিনি রোগের লক্ষণ হিসেবে অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
৬। চর্মরোগ
কিডনি রোগের আরেকটি লক্ষণ হলো ত্বকের সমস্যা। কিডনি যখন শরীর থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য বের করতে পারে না, তখন ত্বক শুষ্ক হওয়া, ত্বকে চুলকানি হওয়া ও ত্বকে ফোসকা দেখা দিতে পারে।
৭। ঘুমের সমস্যা
কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় হিসেবে আরেকটি লক্ষণ হলো ঘুম না হওয়া। প্রায়ই রাতে ঘুম না হলে বা ঘুম কম হলে কিডনি সমস্যা হতে পারে।
৮। জ্বর ও খিচুনি
কিডনি রোগ হলে অতিরিক্ত জ্বর ও খিচুনি দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত জ্বর ও খিচুনি দেখা দিলে কিডনি সমস্যা কিনা তা চেক করে দেখতে হবে।
৯। পিঠে ব্যথা
অনেকেই জানতে চান, কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়? কিডনি ইনফেকশন হলে অনেকের পিঠে ব্যথা হতে পারে। তাই একনাগাড়ে কিছু দিন পিঠের পিছনে ব্যথা হলে কিডনি সমস্যা কিনা তা জানা উচিত।আবার পিঠে ব্যথা হলেই যে কিডনি সমস্যা হয়েছে এমন ভাবার কারণ নেই, কারণ অন্য কারণেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
১০। অসুস্থ বোধ করা
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে আপনারা শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন। যদি অসুস্থ বোধ করেন, অস্থির লগে বা শরীর অস্বাভাবিক মনে হয় তাহলে কিডনি সমস্যা কিনা তা চেক করতে হবে।
আরও পড়ুন
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনি টেস্ট এর নাম
আমরা আগেই বলেছি উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আপনারা কিডনি টেস্ট করবেন। কিন্তু এই লক্ষণ গুলো হলেই যে কিডনি সমস্যা হয়েছে, এমনটি ভাবার কোন কারণ নাই। আবার কোন লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া ছাড়াই কিডনি চুড়ান্ত পর্যায়ে ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
তাই, প্রাপ্ত বয়স্করা বছরে কমপক্ষে ১ বার এবং যারা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা ৬ মাসে কমপক্ষে ১ বার কিডনি টেস্ট করবেন। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে, চিকিৎসক আপনার লক্ষণ গুলো শুনে প্রয়োজনীয় টেস্ট টেষ্ট দিবেন। সেগুলো করে, আপনারা চিকিৎসকের কাছ থেকে নিশ্চিত হবেন কিডনি ভালো আছে কিনা।
কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় হিসেবে সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর স্বাভাবিক মাত্রা কত?
কিডনি সমস্যা বোঝার জন্য চিকিৎসকরা প্রথমত রক্তে ইউরিয়া ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করান। ব্লাডের মাধ্যমে এই পরিক্ষা দুটি করা হয়।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর স্বাভাবিক মাত্রা পুরুষের ক্ষেত্রে ০.৬ থেকে ১.২ gm/dl এবং নারীদের ক্ষেত্রে ০.৫ থেকে ১.১ gm/dl।
এছাড়া কিশোরদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রা ০.৫ থেকে ১.০ gm/dl।
যাদের একটি কিডনি নেই তাদের ক্ষেত্রে ১.৮ পর্যন্ত স্বাভাবিক।
শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক মাত্রা ০.৩ থেকে ০.৭ gm/dl।
কিডনি সমস্যার ক্ষেত্রে সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বেড়ে যায়। তবে, প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ৫.০ gm/dl এর বেশি হলে কিডনি ড্যামেজ হয়েছে বলে ধরা হয়।
বিভিন্ন কারনে ক্রিয়েটিনিন টেস্ট রিপোর্ট স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি বা কম হতে পারে। এছাড়া, ক্রিয়েটিনিন টেস্ট দিয়ে কিডনির সমস্যা বোঝা গেলেও, সমস্যার বিস্তারিত জানতে অন্যান্য টেস্ট করা হয়। তাই, কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার জন্য ক্রিয়েটিনিন টেস্ট এর পাশাপাশি সমস্যার মাত্রা অনুযায়ী অন্যান্য টেস্ট এর প্রয়োজন হতে পারে, যা আপনার চিকিৎসকের পরামর্শে হওয়া উচিত।
আরও পড়ুনকিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে অন্যান্য কিডনি টেস্ট নাম লিস্ট
সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেষ্ট এর পাশাপাশি, কিডনি কত বেশি আক্রান্ত তা সবচেয়ে ভালো বোঝার জন্য জিএফআর (গ্লোমেরুলার ফিল্টট্রেশন রেট) ও সিসিআর (ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট) টেস্ট করানো হয়।
এছাড়া, কিডনির পাথর, কিডনির টিউমার, কিডনির আকার সহ আনন্য সমস্যা বোঝার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হয়।
তাছাড়া, কিডনি সমস্যায় শরীরের অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জটিলতার পরীক্ষা দেয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে রক্তের হিমোগ্লোবিন, ফসফেট, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর মাত্রা পরীক্ষা। এছাড়া কিডনির সমস্যায় রক্তের শর্করা, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ সহ অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়।
এতক্ষণ আমরা আপনাদের কিডনি টেস্ট নাম লিষ্ট গুলো জানালাম। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে আপনারা চিকিৎসকের পরামর্শে কিডনি টেস্ট করাবেন। এবং কিডনি সমস্যা আছে কিনা তা চিকিৎসকের কাছে থেকে জেনে নিবেন।
আমাদের শেষ কথা
আজকে আমরা আপনাদের, কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় গুলো জানালাম।এছাড়া, কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনি টেস্ট নাম লিস্ট জানালাম। আশাকরি আপনারা কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় গুলো বুঝতে পেরেছেন। কিডনির সমস্যা বোঝার জন্য আপনারা অবশ্যই কিডনি রোগের লক্ষণ গুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন। এবং সম্ভব হলে নিয়মিত কিডনি টেস্ট করাবেন।
যদি কোন কারনে কিডনির নিয়মিত চেক-আপ করা সম্ভব না হয়, তাহলে কোন লক্ষণ টের পেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শে কিডনি টেস্ট করান। আমাদের মনে রাখা উচিত, কিডনি ছাড়া আমরা বাচতে পারি না। তাই, কিডনি ভালো রাখার উপায় গুলো জানা জরুরী। কিডনি বিষয়ে আপনারা আরও কিছু জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমাদের টিম আপনাকে সঠিক তথ্য দিতে সবসময় প্রস্তুত।