ঠান্ডা এলার্জির কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা ও ঔষধ এর নাম।
ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা ও ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ এর নাম সম্পর্কে আজকে আপনাদের জানাবো। অনেকেই আছেন যারা ঠান্ডা এলার্জি বা এলার্জিক রাইনাইটিসে ভুগেন। মেডিকেলের ভাষায় ঠান্ডা এলার্জিকে, এলার্জিক রাইনাইটিস বলে। ঠান্ডা এলার্জি বা কোল্ড এলার্জি কোন কঠিন রোগ না হলেও, এটি একটি বিরক্তিকর সমস্যা।
যারা ঠান্ডা এলার্জিতে ভুগেন তারা প্রচন্ডরকম অশান্তি ও অস্বস্তিতে থাকে। ঘন ঘন হাচি দেওয়া, নাকে পানি আসা ও কাশি সহ বিরক্তিকর সমস্যায় পরিবারের লোকজন অনেক সময় বিরক্ত হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা না করলে অ্যজমা, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের কঠিন রোগ হতে পারে।
তাই ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা করা জরুরী। এজন্য আপনারা তিন ধরনের ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা করতে পারেন। প্রথমত ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা, দ্বিতীয়ত ঠান্ডা এলার্জির ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা এবং তৃতীয়ত হচ্ছে ঠান্ডা এলার্জি প্রতিরোধ করা। এগুলোর মধ্যে ঠান্ডা এলার্জি প্রতিরোধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নিচে সবগুলো পদ্ধতি আপনাদের জানাবো।
আজকে যা জানাবো- ঠান্ডা এলার্জি কেন হয়
- ঠান্ডা এলার্জির লক্ষণ
- ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা
- ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ এর নাম
- ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
- ঠান্ডা এলার্জির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
- ঠান্ডা এলার্জি প্রতিরোধের উপায়
ঠান্ডা এলার্জি কেন হয় ?
ঠান্ডা এলার্জির কারণ কী? তা জানা ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ন। অনেকেই মনে করে, ঠান্ডা এলার্জি শুধুমাত্র ঠান্ডা লাগার কারণে হয়। কিন্তু, ঠান্ডা লাগা ছাড়াও আরো অনেক কারণে ঠান্ডা এলার্জি হতে পারে।
কোন জিনিস আমাদের শরীরে ঢোকার পর যাদি হাইপার সেনসেটিভ হয় বা সহ্য না হয় তাহলে সেটিকে বলে এলার্জেন। এই এলার্জেন গুলো এলার্জি হওয়ার কারন। আমাদের শরীরে খাবারের মাধ্যমে এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে এলার্জেন ঢুকে, এলার্জি তৈরি করে। এটা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক জিনিস হতে পারে। যে সকল জিনিসের সংস্পর্শে বা কারণে ঠান্ডা এলার্জি হতে পারে সেগুলো হলোঃ
- জেনেটিকাল কারণ।
- ঠান্ডা লাগা।
- অতিরিক্ত গরম লাগা।
- নিশ্বাসের সাথে বাতাসের বিভিন্ন অনুজীব শরীরে প্রবেশ করা।
- ধুলোবালি, ধোয়া ও গ্যাসের সংস্পর্শে আসা ।
- প্রাণীর লোমের সংস্পর্শে আসা।
- ফুলের সংস্পর্শে আসা।
- এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া। যেমন- বেগুন, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, হাসের ডিম সহ নানা খাবার খাওয়া।
- স্যাতস্যাতে পোশাক ও বিছানা ব্যবহার করা।
- কসমেটিকস ব্যবহার করা, যেমন স্প্রে, সেন্ট ও মুখের ক্রিম।
ঠান্ডা এলার্জির লক্ষণ
ঠান্ডা এলার্জির লক্ষণ গুলো খুব সহজেই বোঝা যায়। তবে, সবগুলো লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে নাও থাকতে পারে। সাধারণত নিচের লক্ষণ গুলো, যদি কারো শরীরে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে ঠান্ডা এলার্জির সমস্যা হয়েছে বলে ধরা হয়। লক্ষণ গুলো হলোঃ
- হাচি ও কাশি হওয়া।
- নাকে পানি আসা, নাক দিয়ে পানি পরা ও নাক আটকে যাওয়া।
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে চুলকানি ও চোখে পানি আসা।
- শ্বাসকষ্ট হওয়া ও অ্যজমা হওয়া।
- নাকে চুলকানি হওয়া ও নাক লাল হয়ে যাওয়া।
- মাথা ব্যথা ও ক্লান্তি হওয়া।
ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা
১। লেবু ও আদার পানি খাওয়া
ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে সবচেয়ে কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা হচ্ছে লেবুর রস ও গরম পানি খাওয়া। সঠিক উপায়ে খাওয়ার জন্য ১ টি লেবুর রস, ১ চামচ আদার রস ও ৩/৪ টি লবঙ্গ একটি পাত্রে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর ফোটানো পানি খাওয়ার মত ঠান্ডা হলে খেয়ে নিন। অতিরিক্ত গরম খাবেন না এবং একদম ঠান্ডা করে খাবেন না। এভাবে দিনে ২ বার করে কয়েকদিন খেলে আপনার ঠান্ডা এলার্জি কমে যাবে।
২। গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু খাওয়া
ঠান্ডা এলার্জি দুর করার উপায় হিসেবে গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু খাওয়া আরকেটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। এজন্য ১ গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে ২ চামচ লেবুর রস ও ২ চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। এভাবে প্রতিদিন ২ বার করে কয়েকদিন খেলে ঠান্ডা এলার্জি দূর হবে।
৩। গরম পানির ভাপ নেওয়া
ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। বিশেষ করে যাদের নাক আটকে থাকে এবং শ্বাসকষ্ট হয়, তারা গরম পানির ভাপ নিলে আরাম পাবেন। একই সাথে তাদের ঠান্ডা এলার্জি দূর হবে। গরম পানির ভাপ নেওয়ার জন্য, একটি পাত্রে ১ লিটার পানি, কিছু আদা কুচি ও কয়েকটি তুলসি পাতা নিবেন। এরপর ঢাকনা দিয়ে ২০ মিনিট ধরে পানি ফুটাবেন। ফোটানো শেষে পাত্রের ঢাকনা তুলে ভাপ নিবেন। এসময় জোরে জোরে শেষ নিবেন এবং ছাড়বেন।
৪। ভিটামিন সি খাওয়া
গবেষনায় দেখা যায়, ভিটামিন সি শরীরে এন্টি হিস্টামিনের ক্ষমতা বাড়ায়। তাই, এলার্জিক রাইনাইটিস বা ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে বেশি বেশি ভিটামিন সি খাওয়া। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্ষতিকর এলার্জেন গুলো দমন করে। বেশি ভিটামিন সি পাওয়ার জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সবচেয়ে ভালো। টমেটো, ব্রকলি ও লেবুতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেতে পারেন।
৫। আনারস ও আনারসের মূল খাওয়া
ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে আনারস ও আনারসের মূল খাওয়া। আনারসে রয়েছে ব্রমেলাইন এনজাইম যা প্রাকৃতিক এন্টিহিস্টামিন হিসেবে কাজ করে। তাই আনারস বা আনারসের মুল খেলে ঠান্ডা এলার্জি দূর হয়। তবে যদি কারো আনারসে এলার্জি থাকে, তাহলে তাদের আনারস খাওয়া উচিত নয়।
৬। প্রোবায়েটিক সমৃদ্ধ খাবার খান
ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খান। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ঠান্ডা এলার্জি কমে। তাই, ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসায় টকদই, পনির, ডার্ক চকলেট ও সয়া দুধ সহ প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খান।
আরও পড়ুন
ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ এর নাম
ঠান্ডা এলার্জির বা নাকের এলার্জির ঔষধ হিসেবে চিকিৎসকরা এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ দিয়ে থাকেন। এছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় নাকের স্প্রে ও নাক বন্ধের ড্রপ দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। আপনারা একজন ডাক্তারের পরামর্শে ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ গুলো খেলে আপনাদের ঠান্ডা এলার্জি দূর হবে। এছাড়াও ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসায় ডাক্তাররা মন্টিলুকাস্ট সোডিয়াম জাতীয় ট্যাবলেট দিয়ে থাকেন।
ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
ঠান্ডা এলার্জি ঔষধ গুলো বয়স ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে খেতে হয়। তাই ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এজন্য, আপনার বয়স অনুযায়ী ডাক্তার পরামর্শে ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম বা ডোজ জেনে নেওয়া উচিত।
ঠান্ডা এলার্জির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
অনেকে ঠান্ডা এলার্জির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকা করে থাকেন। এক্ষেত্রে আমরা বলবো, যদি আপনারা ভালো হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করান, তাহলে ঠান্ডা এলার্জির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও ভালো কাজ করে। কিন্তু, এজন্য অবশ্যই আপনারা ভালো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাবেন।
আরও পড়ুন- দাউদ কেন হয়? দাউদ এর ঘরোয়া চিকিৎসা ও সবচেয়ে ভালো ঔষধ।
- এক রাতে ব্রণ দূর করার কার্যকর ১৪ টি ঘরোয়া উপায়
ঠান্ডা এলার্জি প্রতিরোধের উপায়
আমরা আগেও জানিয়েছি, ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা বা ঠান্ডা এলার্জি দূর করার উপায় হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঠান্ডা এলার্জি প্রতিরোধ করা। ঠান্ডা এলার্জি যাতে আপনার না হয়, সেজন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে আপনার যে কারণে ঠান্ডা এলার্জি হয়, তা খুজে বের করতে হবে। তারপর সে কারণটি প্রতিরোধ করতে হবে। ঠান্ডা এলার্জির প্রতিরোধ করতে যা যা করতে হবেঃ
- ১। ঠান্ডা আবহাওয়ায় না যাওয়া।
- ২। ঠান্ডা জিনিস না খাওয়া।
- ৩। ধুলোবালি, ধোয়া গ্যাস এড়িয়ে চলা।
- ৪। মাস্ক ব্যবহার করে বাইরে যাওয়া।
- ৫। স্যাতস্যাতে পোশাক ও বিছানা ব্যবহার না করা।
- ৬। ঠান্ডা পানির পরিবর্তে হালকা গরম পানি খাওয়া।
- ৭। ঠান্ডা পানির পরিবর্তে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করা।
- ৮। প্রানী ও ফুলের সংস্পর্শে না যাওয়া।
- ৯। এলার্জি জাতীয় খাবার না খাওয়া।
- ১০। স্প্রে ও সুগন্ধি কসমেটিকে এলার্জি হলে তা বন্ধ করা।
- ১১। মশার কয়েল ব্যবহার না করা।
- ১২। ফুসফুস ভালো রাখতে শ্বাসের ব্যায়ম করা।
আমাদের শেষ কথা
আজকে আমরা আপনাদের জানালাম, ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা পদ্ধতি। এর মধ্যে ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা, ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ এর নাম ও ঠান্ডা এলার্জির প্রতিরোধ ব্যবস্থা জানিয়েছি। এছাড়াও ঠান্ডা এলার্জি কেন হয় ও ঠান্ডা এলার্জির লক্ষণ সম্পর্কে জানিয়েছি।
আমাদের পরামর্শ থাকবে, ঠান্ডা এলার্জি দূর করার উপায় হিসেবে আপনারা প্রথমত ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা করবেন। এরপরও না কমলে একজন ডাক্তারের পরামর্শে ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ খাবেন। পাশাপাশি আপনারা ঠান্ডা এলার্জির প্রতিরোধ ব্যবস্থা চালিয়ে যাবেন। ঠান্ডা এলার্জি বিষয়ে আরো কিছু জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।