এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়? মারাত্বক ৯ টি সমস্যা জানেন তো!

এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়, তা নিয়ে আজকে আমরা আপনাদের জানাবো। এছাড়া, এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। অনেকেই রয়েছেন যারা দীর্ঘ মেয়াদী এলার্জিতে ভুগেন। এলার্জির বিভিন্ন লক্ষণ, যেমন চুলকানি, ত্বকে ফুসকুড়ি ও দীর্ঘ মেয়াদি হাঁচি কাশি থেকে বাচতে দীর্ঘ দিন এলার্জির ঔষধ খান।

এলার্জির ঔষধ বা ট্যবলেট

এলার্জির বিভিন্ন সমস্যা থেকে বাচতে যারা অতিরিক্ত (overdoze) এলার্জির ঔষধ খান, তারা নিজের অজান্তে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করছেন। কারণ, দীর্ঘ মেয়াদী ও ওভার ডোজ এলার্জির ঔষধ খেলে একজন মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। অথচ, নিয়ম মেনে এলার্জির ঔষধ খেলে এলার্জি থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। চলুন দেখে নেই, এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয় এবং এলার্জির ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম।

আজকে যা জানাবো

  • এলার্জির ঔষধ কেন খায়?
  • এলার্জির ঔষধ খেলে কাদের সমস্যা হয়
  • এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়?
  • এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
  • এলার্জির ঔষধ খাওয়ার সতর্কতা

এলার্জির ঔষধ কেন খায়?

আপনারা শুনে আশ্চর্য হবেন যে, এলার্জির ঔষধ খেলেও এলার্জি কখনো ভালো হয় না। তারপরও এলার্জি ঔষধ কেন খাওয়া হয়? একজন মানুষের এলার্জি হলে তার শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন অতিরিক্ত চুলকানি, ত্বকে ফুসকুড়ি, দীর্ঘ মেয়াদী হাচি কাশি ও নাকে-চোখে পানি আসা। এসব এলার্জির লক্ষণ গুলো দমন করা বা চাপিয়ে রাখার জন্য এলার্জির ঔষধ খাওয়া হয়।

ঔষুধের মাধ্যমে স্থায়ী ভাবে এলার্জি ভালো না হলেও, স্থায়ী ভাবে এলার্জি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য যেসব জিনিসে বা খাবারে এলার্জি হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। এছাড়া শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লে স্থায়ীভাবে এলার্জি মুক্ত হওয়া সম্ভব।

এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কাদের সমস্যা হয়?

এলার্জির অতিরিক্ত (Overdose) ঔষধ খেলে সবার ক্ষেত্রে কম বেশি সাইড ইফেক্ট আছে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়, যাদের ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে। অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে এদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া শিশুদের ও ষাটোর্ধ বয়সী ব্যাক্তিদের অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খাওয়া খুবই ঝুকিপূর্ন।তাই এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়, সেটার মাত্রা নির্ভর করে কে খাচ্ছে তার উপর।

আরও পড়ুন

এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়?

একজন নারী বেশি এলার্জির ঔষধ বা ট্যবলেট খাচ্ছে

আমরা আগেই জানিয়েছি, এলার্জির ঔষধ গুলো এলার্জি জনিত নানা লক্ষণ দমন করার জন্য খাওয়া হয়। এলার্জির লক্ষণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিরক্তিকর অতিরিক্ত চুলকানি। একারণে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় র‍্যাশ ও ফুসকুড়ি হয়। এছাড়া অনেকের কোল্ড এলার্জির কারণে হাঁচি-কাশি লেগে থেকে।

এসব কারণে অনেকে বিরক্ত হয়ে, অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খান। অর্থাৎ দৈনিক যেখানে একটি ট্যাবলেট খাওয়া যাবে, সেখানে চুলকানি থেকে বাচতে দৈনিক ২/৩ টা ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেন। অনেকে আবার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সারা বছর এলার্জির ঔষধ খান।

আমেরিকান ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (FDA) অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে কি হয়, তার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সেখানে তারা যা জানিয়েছে তা হলোঃ

প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এলার্জির অতিরিক্ত ঔষধ খেলে যা হতে পারে-

১। হার্টবিট বেড়ে যাওয়া

অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া। হার্ট বিট বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। একারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে, হার্টের রোগী ও ডায়াবেটিস রোগীরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুকিতে থাকেন।

২। ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া

এলার্জির অতিরিক্ত (overdose) ঔষধ খেলে ব্লাড প্রেসার কমে যায়। এটি এলার্জির ঔষধ খাওয়ার একটি কমন সাইড ইফেক্ট। ব্লাড প্রেসার কমে গেলে, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মত ঘটনা হয়ে মৃত্যু হতে পারে।

৩। মুত্রাশয়ের অক্ষমতা

অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে কি হয়, সে বিষয়ে FDA সহ বিভিন্ন ড্রাগ রিসার্চ প্রতিবেদনে মুত্রাশয়ের অক্ষমতার কথা বলা হয়েছে।তারা জানিয়েছে, অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে ব্লডার বা মুত্রাশয়ের কার্যকারিতা কমে যায়। ফলে প্রসাব আটকে রাখা সম্ভব হয় না। একারনে ঘন ঘন প্রসাব হয় বা প্রসাব পরে যায়।

৪। বিরক্তি ও অস্থিরতা

অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে বিরক্তি ও অস্থিরতা দেখা দেয়। একারনে মেজাজ খিটখিটে থাকে ও অস্থির লাগে। কোন কিছু করতে ভালো লাগে না। সারাদিন বিষন্নতা কাজ করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি মানসিক সমস্যা তৈরি করে।

৫। জ্বর হওয়া

প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে (overdose) অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে জ্বর হতে পারে। অনেক সময় তা অতিরিক্ত জ্বর ও খিচুনিতে পরিনত হতে পারে।

৬। কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া

অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে কি হয়, সে বিষয়ে বিভিন্ন ড্রাগ গবেষণায় কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কথা জানিয়েছে। অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

৭। মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া

অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে মুখ ও গলা শুকিয়ে যেতে পারে। মূলত ড্রাগের রিএকশনের কারনে এটি হয়। এজন্য অতিরিক্ত এলার্জি খেলে প্রচুর পানির পিপাসা লাগে।এসময় শরীরে অনেক পানির চাহিদা থাকে।

৮। শারীরিক দূর্বলতা

এলার্জির ওভারডোজ বা অতিরিক্ত ট্যাবলেট খেলে প্রচুর শারীরিক দূর্বলতা দেখা দেয়। সারাক্ষন তন্দ্রা বা ঘুম ঘুম ভাব থাকে। বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না। শারীরিক দূর্বলতার কারণে এসব সমস্যা আরো বেশি দেখা দেয়।

৯। কোমা বা অচেতনাবস্থা

অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে কি হয়, সে বিষয়ে গবেষণায় সবচেয়ে ভয়াবহ যে সমস্যার কথা বলা হয়েছে সেটি হলো অচেতনাবস্থা বা কোমায় চলে যাওয়া। অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে মানুষ আচেতন বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় এটা ভয়াবহ খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খাওয়ার কারণে একজন মানুষ কোমায় চলে যেতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে এলার্জির অতিরিক্ত ঔষধ খেলে কি হয়?

শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এলার্জি ঔষধ খেলে কখনো কখনো প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া, বিরক্তি ও অস্থিরতা দেখা দেওয়া, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, শ্বাস কম নেওয়া ও খিচুনি হতে পারে।

এছাড়া হ্যালুসিনেশন হওয়া, তন্দ্রা হওয়া, মথাব্যথা হওয়া, শরীরে ফুসকুড়ি হওয়া ও অচেতনাবস্থা বা কোমায় যাওয়ার মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন

এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

একজন নারী এলার্জির ঔষধ বা ট্যবলেট খাচ্ছে

এলার্জির লক্ষণ (Symptoms) গুলো বন্ধ করার জন্য নানা ধরনের এলার্জির ঔষধ খাওয়া হয়। কোনোটা চুলকানির জন্য ভালো কাজ করে। আবার কোনোটা ঠান্ডা এলার্জির জন্য ভালো কাজ করে। একারণে, এলার্জির লক্ষণ ভেদে ডাক্তাররা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের ঔষধ দিয়ে থাকেন।

আমাদের দেশে এলার্জির চিকিৎসায় চার ধরনের ঔষধ বা ট্যবলেট বেশি খাওয়া হয়। এগুলো হলোঃ

  • ১। ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine) ‌যেমন- Fexo
  • ২। সেটিরিজিন (Cetirizine) যেমন- Alatrol
  • ৩। ডেসলোরাটিডিন (Desloratadine) যেমন- Deslor
  • ৪। লোরাটিডিন (Loratadine) যেমন- Oradin

নিচে, আমরা এলার্জির চিকিৎসায় বহুল ব্যবহারিত ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine) গ্রুপের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম আপনাদের জানাচ্ছি।

ট্যবলেটঃ ১২ বছরের উপরে ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ২ টি করে ৬০ মি. গ্রা. ট্যাবলেট অথবা প্রতিদিন একটি করে ১৮০ মি.গ্রা. ফেক্সোফানাডিন ট্যাবলেট খেতে হয়।

৬-১১ বছরের শিশুদের জন্য দৈনিক দুই বার ৩০ মি.গ্রা. ফেক্সো ট্যাবলেট অথবা প্রতিদিন ১ টি করে ৬০ মি. গ্রা. ফেক্সোফানাডিন ট্যাবলেট খেতে হয়।

ওরাল সাসপেনশনঃ ২-১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য দৈনিক ২ বার ৩০ মি. গ্রা. (৫ মিলি) সাসেপেনশন খেতে হয়।

৬ মাস - ২ বছরের শিশুদের এলার্জির ঔষধ খাওয়াতে হয় না। তবে জরুরী প্রয়োজনে চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন করলে দৈনিক ২ বার ১৫ মি.গ্রা (২.৫ মিলি) সাসপেনশন সেব্য।

আমরা উপরে শুধুমাত্র এলার্জির জন্য খাওয়া হয়, ফেক্সোফেনাডিন গ্রুপের ঔষধের ডোজ আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আপনাদের কারো যদি এলার্জির ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ খাবেন। এলার্জির ঔষধ সহ কোনো ঔষধই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

আরও পড়ুন

এলার্জির ঔষধ খাওয়ার সতর্কতা

আপনারা, কখনো অতিরিক্ত চুলকানি বা ঠান্ডা সমস্যার কারনে বিরক্ত হয়ে অতিরিক্ত (Overdose) এলার্জির ঔষধ খাবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক হয়তো, আপনার এলার্জির ঔষধ পরিবর্তন করে দিতে পারেন। এছাড়া, এলার্জির ঔষধ কত দিন খাবেন, তাও ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিবেন।

তবে আপনারা ঔষধ খাওয়ার পরিবর্তে, ঘরে বসে এলার্জি দূর করার উপায় হিসেবে, এলার্জি চুলকানি দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা ফলো করতে পারেন। এছাড়া, যারা ঠান্ডা এলার্জিতে ভুগেন তারাও ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা ফলো করে এলার্জি প্রতিরোধ করতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা

আজকে আমরা আপনাদের জানালাম, এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়, এবং এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম। এ প্রসঙ্গে আমরা আরো জানিয়েছে, এলার্জির ঔষধ কেন খাওয়া হয়, কিছু এলার্জির ঔষধ এর নাম এবং এলার্জির ঔষধ খাওয়ার সতর্কতা।

শেষ কথায় আমরা আবারো বলছি, আপনারা অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খাবেন না। কারণ, অতিরিক্ত এলার্জির ঔষধ খেলে কি হয় তা তো আপনারা জানলেন। যদি একান্ত এলার্জির ঔষধ খেতে হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শে এলার্জির ঔষধের ডোজ অনুযায়ী খাবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url